পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯১
মহরম পর্ব্ব—পঞ্চদশ প্রবাহ

বয়সেও যদি উহার মনের মলিনতা দূর না হইয়া থাকে, পাপজনিত আত্মগ্লানি যদি এখনও উপস্থিত না হইয়া থাকে, কৃত পাপের জন্য এখনও যদি অনুতাপ না হইয়া থাকে, তবে আর কবে হইবে? চিরকাল পাপ-পঙ্কে জড়িত থাকিলে শেষ দশায় অবশ্যই স্বকৃত পাপের জন্য বিশেষ অনুতাপিত হইতে হয়। অনেকেই গুপ্ত পাপ নিজ মুখে স্বীকার করে। যে পাপ স্বীকারে প্রাণবিনাশ হইতে পারে, ঈশ্বরের এমনই মহিমা যে, সে পাপও পাপী লোকে নিজ মুখে স্বীকার করিয়া আত্মবিসর্জ্জন করিয়া থাকে। পাপ কিছুতেই গোপন থাকিবার নহে,আবার মন সরল না হইলেও ধর্ম্মে মতি হয় না, ঈশ্বরেও ভক্তি হয় না। যে ব্যক্তি ধর্ম্ম-সুধা পিপাসু হইয়া বৃদ্ধ বয়সে কত পরিশ্রমে দামেস্ক হইতে মুসাল নগরে এতদূর আসিয়াছে, তাহার কি চাতুরী থাকিতে পারে? মন যে দিকে ফিরাও সেদিকেই যায়। ভাল কার্য্যকে মন্দ ভাবিয়া বুদ্ধি চালনা কর, চিন্তাশক্তির ক্ষমতা বিচার কর, কি দেখিবে? পদে পদে দোষ-পদে পদে বিপদ! ঐ চিন্তা আবার ভাল দিকে ফিরাও—কি দেখিবে? সুফল, মঙ্গল ও ও সৎ। এই আগন্তুক যদি সরলভাবে ধর্ম্ম-পিপাসু হইয়া আসিয়া থাকে তবে দেখ দেখি, উহার মন কত প্রশস্ত? ধর্ম্মের জন্য কত লালায়িত? বল দেখি স্বর্গ কাহার জন্য? এই ব্যক্তিই ত জান্নাতের যথার্থ অধিকারী।”

 এব্‌নে আব্বাস আর কোন উত্তর করিলেন না। অন্য কথার আলোচনায় প্রবৃত্ত হইলেন। আগন্তুক বৃদ্ধও তখন মন্দিরের অপর পার্শ্বে দাঁড়াইয়া তাহার লুক্কায়িত বর্শার ফুলকটি বিশেষ মনসংযোগ সহকারে দেখিতেছে এবং মৃদুস্বরে বলিতেছে, “এই ত আমার সময়, এক আঘাতেই মারিয়া ফেলিতে পারিব। আর যে বিষ ইহাতে সংযুক্ত করিয়াছি, রক্তের সহিত একটু মিশ্রিত হইলে, কাহার সাধ্য হাসানকে রক্ষা করে? উপাসনার সময়ই উপযুক্ত সময়। যেমন ‘ছেজ্‌দা’ (দণ্ডবৎ হইয়া ঈশ্বরকে প্রণাম) দিবে, আমিও সেই সময় বর্শার আঘাত করিব। পৃষ্ঠে আঘাত করিয়া বক্ষস্থলে বিদ্ধ না হইলে আর ছাড়িব না। কিন্তু উপাসনামন্দিরে হাসানকে একা পাইবার সুযোগ অতি কম। দেখি, চেষ্টার অসাধ্য কি