পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৫
মহরম পর্ব্ব—পঞ্চদশ প্রবাহ

যাতনা তেমনিই রহিয়া গেল। ইহার অর্থ কে বুঝিবে? সেই পরম কারুণিক পরমেশ্বর ভিন্ন আর কাহারও বুঝিবার সাধ্য নাই। ক্ষতস্থান দিন দিন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইতে লাগিল। জ্বালা-যন্ত্রণাও বাড়িতে লাগিল। এমাম হাসানও শেষে উত্থানশক্তি রহিত হইয়া পড়িলেন।

 একদিন হোসেন আসিয়া ভ্রাতাকে বলিলেন, “ভ্রাতঃ! এই রওজা মোবারকে কোন প্রকার বিপদের সম্ভাবনা নাই। কিন্তু মানুষের শরীর অপবিত্র; বিশেষ আপনার যে ব্যাধি, তাহাতে আরও সন্দেহ হয়। পবিত্র স্থানে পবিত্র অবস্থায় না থাকিতে পারিলে স্থানের অবমাননা করা হয়। ক্ষতস্থান কেমন ভয়ানক রূপ ধারণ করিয়াছে; বাটীতে চলুন; আমরা সকলে আপনার সেবা-শুশ্রূষা করিব। জগতে জননীর স্নেহ নিঃস্বার্থ, সন্তানের সাংঘাতিক পীড়ায় মায়ের অন্তরে যেরূপ বেদনা লাগে, এমন আর কাহারও লাগে না। যদিও ভাগ্যদোষে সে স্নেহ-মমতা হইতে বঞ্চিত হইয়াছেন, তথাপি আজ্ঞাবহ কিঙ্কর বর্ত্তমান আছে। সেই মাতার গর্ভে আমিও জন্মগ্রহণ করিয়াছি। আমার সাধ্যমত আমি আপনার সেবা করিব।”

 এমাম হাসান আর বাক্যব্যয় করিলেন না। হোসেন ও আবুয়ল কাসেমের স্কন্ধোপরি হস্ত রাখিয়া অতিকষ্টে বাটীতে পৌঁছিলেন। হাস্‌নেবানু, জয়নাব অথবা জাএদা এই তিন স্ত্রীর মধ্যে কোন স্ত্রীর ঘরেই তিনি যাইলেন না; প্রিয় পাত্র হোসেনের গৃহেই আবাস গ্রহণ করিলেন। সকলেই তাঁহার সেবা-শুশ্রূষায় রত হইল।

 এক জাএদার প্রতি সন্দেহ করিয়া হাসান যেন সকলের প্রতিই সন্দেহ করিলেন। কিন্তু সেই মানসিক ভাব প্রকাশ্যে কাহাকেও কিছু বুঝিতে দিলেন না। তবে ভাবগতিক দেখিয়া বাহ্য-ব্যবহারে সকলেই বুঝিয়াছিলেন যে, পরিজনবর্গের— বিশেষতঃ নিজ স্ত্রীগণের প্রতি হাসান মহাবিরক্ত। হাস্‌নেবানু ও জয়নাবের প্রতি তাঁহার কেবল একটু বিরক্তিভাব প্রকাশ পাইত, কিন্তু জাএদাকে তিনি দেখিয়া ভয় করিতেন।

 হাস্‌নেবানুর সেবা-শুশ্রূষায় এমাম হাসানের বিরক্তিভাব কেহই দেখিতে পায় নাই। জয়নাব আসিয়া নিকটে বসিলেও তিনি কিছু বলিতেন না, কিন্তু