পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৯৬

জাএদাকে দেখিলেই চক্ষু বন্ধ করিয়া ফেলিতেন। দুই চার দিনে সকলেই জানিল যে, এমাম হাসান বোধ হয়, জাএদাকে দেখিতে ইচ্ছা করেন না। কারণ অনুসন্ধানেও ত্রুটী হইল না। শেষে সাব্যস্ত হইল যে, জাএদার ঘরে গেলেই বিপদগ্রস্ত হন, অসহ্য বেদনায় আক্রান্ত হন— এই সকল কারণেই বোধ হয়, জাএদার প্রতি কোনরূপ সন্দেহ হইয়া থাকিবে। কেই এই প্রকার—কেহ অন্যপ্রকার—কেহ কেহ বা অন্য নানা প্রকার কথার আন্দোলন করিতে লাগিলেন। কিন্তু কেহই কিছু স্থির করিতে পারিলেন না। এমাম হাসানের ভাবগতিক কিছু কিছু বুঝিতে পারিয়া হোসেন তাঁহার আহারীয় সামগ্রীর প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখিতে লাগিলেন। ভ্রাতার মনের ভাব পরীক্ষা করিবার জন্য হাসানের সম্মুখে হাসনেবানু ও জয়নাবকে বলিলেন, “আপনারা ইঁহার আহারীয় দ্রব্যাদি বিশেষ যত্নে রক্ষা করিবেন।”

 হাসনেবানু কহিলেন, “আমি সাহস করিয়া কিছুই বলিতে পারি না। তবে এইমাত্র বলি যে, যাহা হইবার তাহা হইয়া গিয়াছে। এক্ষণে খাদ্যসামগ্রীর কোন দোষে আর পীড়া বৃদ্ধি হইবে না। আমি বিশেষ সতর্ক হইয়াছি। আমি অগ্রে না খাইয়া ইঁহাকে আর কিছুই খাইতে দিই না। যত পীড়া, যত অপকার, সকলই আমি মাথায় করিয়া লইয়াছি, খোদার কৃপায় এক্ষণে উনি আরোগ্য লাভ করিলেই সকল কথা বলিব।”

 হাসনেবানুর প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগপূর্ব্বক এমাম হাসান বলিলেন, “অদৃষ্টের লেখা খণ্ডাইতে কাহারও সাধ্য নাই! তোমার যাহাতে সন্দেহ দূর হয়, তুমি সেই প্রকারে আমার আহারীয় ও পানীয় সমুদয় সাবধানে ও যত্নে রাখিও।”

 হাসনেবানু পূর্ব্ব হইতেই সতর্ক ছিলেন, স্বামীর কথায় একটু আভাস পাইয়া আরও যথাসাধ্য সাবধান ও সতর্ক হইলেন। আহারীয় সামগ্রী বিশেষ যত্নে রক্ষিত হইতে লাগিল। বিশেষ পরীক্ষা করিয়া হাসনেবানু রোগীর পথ্য ইত্যাদি প্রদান করিতে লাগিলেন। জলের সোরাহীর উপর পরিস্কার বস্ত্র আবৃত করিয়া একেবারে শীলমোহরে বন্ধ করিলেন; অপর কেহ হাসানের ব্যাধিগৃহে আসিতে না পারে, কৌশলে তাহার ব্যবস্থা করিলেন।