তিনবার, না হয় চারবার,—পাঁচবারের বারে আর কিছুতেই রক্ষা নাই। হতাশ হও কেন? এই দেখ, এজিদ্ এই সকল কথা শুনিয়াই এই ঔষধ পাঠাইয়া দিয়াছে। ইহাতে আর নিস্তার নাই।”—এই কথা বলিয়াই মায়মুনা আপন কটিদেশ হইতে একটি ক্ষুদ্র পুঁটুলি বাহির করিয়া জাএদাকে দেখাইল। জাএদা জিজ্ঞাসা করিলেন, “ও কি?”
“মহাবিষ।”
“মহাবিষ কি?”
মায়মুনা উত্তর করিল, “এ সর্পবিষ নয়, অন্য কোন বিষও নয়, —লোকে ইহা মূল্যবান জ্ঞানে ব্যবহার করিয়া থাকে। ইহার মুল্য অধিক, দেখিতেও অতি উজ্জ্বল। আকার পরিবর্ত্তনে অণুমাত্র পেটে পড়িলেই মানুষের পরমায়ু শেষ করে।”
“কি প্রকারে খাওয়াইতে হয়?”
মায়মুনা কহিল, “খাদ্যসামগ্রীর সহিত মিশাইয়া দিতে পারিলেই হইল। পানিতে মিশাইয়া খাওয়াইতে পারিলে ত আর কথাই নাই। অন্য অন্য বিষ পরিপাক হইলেও হইতে পারে, কিন্তু ইহা পরিপাক করিবার ক্ষমতা পাকযন্ত্রের নাই। এ একটি চূর্ণমাত্র। পেটের মধ্যে যেখানে পড়িবে নাড়ী, পাকযন্ত্র, কলিজা, সমস্তই কাটিয়া কাটিয়া খণ্ড খণ্ড করিবে।”
“এতবড় ভয়ানক বিষ! ছুঁইতেও যে ভয় হয়!”
“ছুঁইলে কিছু হয় না। হাতে করিয়া রগড়াইলেও কিছু হয় না, হুড়কমের {অন্ননালীর) নীচে না নামিলে কোন ভয় নাই। এ-ত অন্য বিষ নয়, এ হীরক-চূর্ণ”
“হীরার গুঁড়া?—আচ্ছা, দাও।”
মায়মুনা তখনি জাএদার হাতে পুঁটুলি দিল। পুঁটুলি হাতে লইয়া জাএদা পুনরায় বলিতে লাগিলেন, “আমার ঘরে যে, আর আসিবেন,— সে আশা আর নাই। যেরূপ সতর্কতা, সাবধানতা দেখিলাম, তাহাতে খাদ্যসামগ্রীর সহিত মিশাইবার সুবিধা পাইব কোথায়?—হাসনেবানু কিম্বা জয়নাব, দু’য়ের একজন না মিশাইলে আর কাহারও সাধ্য নাই।”