পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১০২

গৃহসমীপে বা হাসনেবানুর গৃহের নিকটে, অথবা জয়নাবের গৃহের দ্বারে। কে কোথায় কি বলিতেছে, কি করিতেছে, সমুদয় তিনি সন্ধান লইতে লাগিলেন। বাড়ীর লোক—বিশেষতঃ হাসানের স্ত্রী, শত শত বার আনাগোনা করিলেও কাহারও কিছু বলিবার সাধ্য নাই। কিন্তু হাসনেবানুর চক্ষে পড়িলে অবশ্যই তিনি সতর্ক হইতেন। স্বামীর সেবাশুশ্রূষায় হাসনেবানু সর্ব্বদাই ব্যতিব্যস্ত, আহার-নিদ্রা একেবারে ছাড়িয়াছেন। জীবনে নামাজ (উপাসনা) কাজা[১] করিয়াছেন কি না সন্দেহ, সে নামাজ এখন আর সময়মত হইতেছে না। নানা প্রকার সন্দেহ ও চিন্তায় হাসনেবানু একেবারে বিহ্বলপ্রায় হইয়াছেন। স্বামীর কাতর শব্দে, প্রতি বাক্যে তাঁহার অন্তরের গ্রন্থিসকল ছিঁড়িয়া যাইতেছে। যখনই অবসর পাইতেছেন, তখনই তিনি ঈশ্বরের উপাসনা করিয়া স্বামীর আরোগ্য কামনা করিতেছেন। জয়নাব মনের দুঃখ মনেই রাখিতেন; হাসনেবানুর কথাক্রমেই তিনি দিবানিশি খাটিতেন। বিনাকার্য্যে তিলার্দ্ধকালও স্বামীপদ-ছাড়া হইতেন না। নিজ প্রাণ ও নিজ শরীরের প্রতি তাঁহার মায়া-মমতা নাই। হাসানের চিন্তাতেই বাড়ীর সকলেই (জাএদা ছাড়া) মহাচিন্তিত ও মহাব্যস্ত!

 জাএদার চিন্তায় জাএদা ব্যস্ত। জাএদা কেবল সময় অনুসন্ধান করিতেছেন, সুযোগের পথ খুঁজিতেছেন। ক্রমে ক্রমে রাত্রিও অধিক হইয়া আসিল। সকলেই আপন আপন স্থানে নিদ্রাদেবীর উপাসনায় স্ব স্ব শয্যায় শয়ন করিলেন। হাসনেবানু প্রতি নিশিতেই প্রভু মোহাম্মদের “রওজা শরীফে” যাইয়া ঈশ্বরের নিকট স্বামীর আরোগ্য কামনা করিতেন। আজও নিয়মিত সময়ে সকলে নিদ্রিত হইলে তসবীহ্ হস্তে করিয়া ঘরের বাহির হইলেন। জাএদা জাগিয়াছিলেন বলিয়াই দেখিলেন যে, হাসনেবানু রওজা মোবারকের দিকে যাইতেছেন। গোপনে গোপনে তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে যাইয়া আরও দেখিলেন যে, হাসনেবানুর ঈশ্বরের উপাসনার্থ দণ্ডয়ামান হইলেন। দেখিয়া আসিয়াই তিনি মায়মুনাকে বলিলেন, “মায়মুনা! বোধ হয়, এই-ই উত্তম সুযোগ। হাসনেবানু এখন ঘরে নাই, রওজা হইতে


  1. কাজা—নিয়মিত সময়ের অতিক্রম