পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১০৪

পুঁটুলি খুলিতে আরম্ভ করিলেন। খুলিতে খুলিতে ক্ষান্ত দিয়া, কি আবার ভাবিয়া, আর খুলিলেন না! হাসানের মুখের দিকে আবার চাহিয়া রহিলেন, ক্রমে ক্রমে তাঁহার মুখ, বক্ষ, ঊরু ও পদতল পর্যন্ত সর্ব্বাঙ্গে চক্ষু পড়িলে জাএদার আর সে ভাব থাকিল না। তাড়াতাড়ি বিষের পুঁটুলি লইয়া তিনি সোরাহীর মুখের কাপড়ের উপর সমুদয় হীরকচূর্ণ ঢালিয়া দিলেন এবং দক্ষিণ হস্তে সোরাহীর মুখবন্ধ বস্ত্রের উপর বিষ ঘসিতে আরম্ভ করিলেন। তিনি হাসানের পদতলে যাহাকে দেখিলেন, তাহাকেই বার বার বিষনয়নে দেখিতে লাগিলেন; স্বামীর মুখপানে আর ফিরিয়া চাহিলেন না। সমুদয় চূর্ণ জলে প্রবেশ করিলে তিনি ত্রস্তভাবে ঘর হইতে বাহিরে যাইবার সময়, স্বামীর মুখের দিকে তাকাইয়া পা ফেলিতেই দ্বারে আঘাত লাগিয়া একটু শব্দ হইল। ঐ শব্দে এমাম হাসানের নিদ্রাভঙ্গ হইল। নিদ্রাভঙ্গ হইল বটে, কিন্তু চক্ষের পাতা খুলিল না। দ্বার পূর্ব্বমত রাখিয়া জাএদা অতি ত্রস্তে গৃহের বাহিরে আসিয়া কিঞ্চিৎ ভীতা হইলেন। শেষে দেখিলেন, আর কেহ নহে—মায়মুনা! জাএদার হাত ধরিয়া লইয়া মায়মুনা অতি চঞ্চলপদে ব্যস্তভাবে জাএদার গৃহে প্রবেশ করিল।

 দ্বারে জাএদার পদাঘাত-শব্দে এমাম হাসানের নিদ্রাভঙ্গ হইয়াছিল; চক্ষু খুলিয়া যাহা দেখিলেন, তাহাতে ঐ শব্দের প্রকৃত কারণ কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না। গৃহমধ্যে সকলেই নিদ্রিত;—দীপ পূর্ব্বমত জ্বলিতেছে যেখানে যাহা ছিল, সমস্তই ঠিক রহিয়াছে। হঠাৎ শব্দে তাঁহার সুখস্বপ্ন ভাঙ্গিয়া গেল, ইহাই কেবল আক্ষেপের কারণ হইল। তিনি জয়নাবকে ডাকিতে লাগিলেন। জয়নাব জাগিবামাত্রই হাসান তাঁহাকে বলিলেন, “জয়নাব। শীঘ্র শীঘ্র আমাকে পানি দাও। অজু (উপাসনার পূর্ব্বে হস্তপদমুখাদি বিধিমতে ধৌত) করিয়া ঈশ্বরের উপাসনা করিব। এইমাত্র পিতামাতা এবং মাতামহকে স্বপ্নে দেখিলাম। তাঁহারা যেন আমার অপেক্ষায় দাঁড়াইয়া আছেন। একটু জল পান করিব,—পিপাসা অত্যন্ত হইয়াছে।”

 জল আনিতে জয়নাব বাহিরে গেলেন। হাসনেবানু তস্‌বীহ্ হাতে ঈশ্বরের নাম করিতে করিতে গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলেন। এমাম হাসানকে