পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৭
মহরম পর্ব্ব—ষােড়শ প্রবাহ

যন্ত্রণায় সকলই ভুলিয়াছি। ভাই! দেখ ত,—আমার মুখের বর্ণ কি পরিবর্ত্তিত হইয়াছে?”

 ভ্রাতার মুখপানে দৃষ্টিপাত করিয়া হোসেন কাঁদিতে লাগিলেন। আর আর সকলে বলিতে লাগিল, “আহা!—জোতির্ম্ময় চন্দ্রবদনে বিষাদ-নীলিমা-রেখা পড়িয়াছে।”

 এই কথা শুনিয়া হাসান অনুজকে বলিলেন, “ভাই! বৃথা কাঁদিয়া লাভ কি? আমার আর বেশী বিলম্ব নাই, চিরবিদায়ের সময় অতি নিকট। মাতামহ যাহা যাহা বলিয়াছিলেন, সকলই প্রত্যক্ষ করিতেছি। ভাই! মাতামহ সশরীরে ঈশ্বরের আদেশে একবার ঈশ্বরের স্থানে নীত হইয়াছিলেন। সেখানে কোন নির্দ্দিষ্ট স্থানে তিনি অতি রমণীয় দুইটি ঘর সুসজ্জিত দেখিলেন। একটি সবুজ বর্ণ, আর একটি লোহিত বর্ণ। কাহার ঘর, প্রহরীকে এই কথা জিজ্ঞাসা করাতে প্রহরী উত্তর করিল, “আপনার অন্তরের নিধি, হৃদয়ের ধন এবং নয়নের পুত্তলী হাসান-হোসেনের জন্য এই দুইটি প্রস্তুত হইয়াছে। ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের কারণ জিজ্ঞাসা করিলে প্রহরী চোখের জল ফেলিয়া নতশির হইল, কোন উত্তর করিল না। জিব্‌রাইল তাঁহার সঙ্গে সঙ্গেই ছিলেন। তিনিই মাতামহকে বলিলেন, ‘অয়ে মোহাম্মদ! দ্বারবান কারণ প্রকাশে লজ্জিত হইতেছে, আমি প্রকাশ করিব! আজ আপনি যাহা জিজ্ঞাসা করিবেন, আমি তাহাই বলিতে আজ্ঞাপ্রাপ্ত হইয়াছি। নিদারুণ গুপ্তকথা হইলেও আজ আমি আপনার নিকট তাহা ব্যক্ত করিব। ঐ দুইটি ঘর ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের হইবার কারণ কি, উহার সবিশেষ বৃত্তান্ত বলিতেছি শ্রবণ করুন:—সবুজ বর্ণ গৃহ কনিষ্ঠ দৌহিত্র হোসেনের জন্য প্রস্তুত হইয়াছে। আপনার অবর্ত্তমানে একদল পিশাচ শত্রুতা সাধন করিয়া হাসানকে বিষপান করাইবে এবং মৃত্যুর সময় হাসানের মুখ সবুজ বর্ণ হইবে; তন্নিমিত্তই ঐ গৃহটি সবুজবর্ণ। ঐ শত্রুগণ অস্ত্র দ্বারা আপনার কনিষ্ঠ দৌহিত্র হোসেনের মস্তকচ্ছেদন করবে। ঐ রক্তমাখা মুখের চিহ্নই লোহিত বর্ণের কারণ।—মাতামহের বাক্য আজ সফল হইল। আমার মুখের বর্ণ যখন বিবর্ণ হইয়াছে, তখন পরমায়ুও আজ শেষ