সপ্তদশ প্রবাহ
মদিনাবাসীরা হাসানের শোকে বড়ই কাতর হইলেন। পরিজনেরা দশ দিবস পর্য্যন্ত কে কোথায় রহিল, কে কোথায় পড়িয়া দিল, কে কোথায় চলিয়া গেল, কেহই তাহার সন্ধান লইলেন না; সকলেই হাসানের শোকে দিবারাত্র অজ্ঞান! পবিত্র দেহ মৃত্তিকায় প্রোথিত হইতে না হইতেই নৃশংস মন্ত্রী মারওয়ান দামেস্ক নগরে এজিদের নিকট সংবাদ পাঠাইয়াছিলেন: তাঁহার সমুদয় কার্য্য শেষ হয় নাই, সেই জন্য স্বয়ং দামেস্ক যাত্রা করিতে পারিলেন না। এমাম-বংশ একেবারে ধ্বংস করিবার মানসে ছদ্মবেশে তিনি মদিনায় রহিয়াছেন। দামেস্ক হইতে ক্রমে ক্রমে সৈন্য় আসিয়া পূর্ব্বোক্ত পর্ব্বত প্রান্তস্থ গুপ্তস্থানে জুটিতেছে। হাসানের প্রাণ বিয়োগের পর পরিজনেরা,হাসনেবানু, জয়নাব, শাহরেবানু (হোসেনের স্ত্রী) ও সখিনা (হোসেনের কন্যা) প্রভৃতি শোকে এবং দুঃখে অবসন্ন হইয়া প্রায় মৃতবৎ হইয়া আছেন। হোসেন ও আবুল কাসেম ঈশ্বরের আরাধনায় মনোনিবেশ করিয়া উপস্থিত শোকতাপ হইতে আত্মরক্ষার উপায় নির্দ্ধারণ করিতেছেন। জাএদা নিজ চিন্তায় চিন্তিত ও ব্যতিব্যস্ত; কি করিবেন, হঠাৎ গৃহত্যাগ করিবেন কি-না, ভাবিয়া স্থির করিতে পারিতেছেন না। মায়মুনার উপদেশে তিনি এতদূর পর্য্যন্ত আসিয়াছেন; এক্ষণে তাহার কথাই বেশী মূল্যবান বলিয়া তাঁহার মনে ধারণা হইল, আবার মায়মুনার শেষ কথা কয়টি এক্ষণে তাঁহার আরও ভাল লাগিল। কারণ, এখন তিনি বিধবা।
পূর্ব্বে গড়াপেটা সকলই হইয়া গিয়াছিল, কেবল উত্তেজনা-রসায়নের সংযোগটির অপেক্ষা ছিল মাত্র! মায়মুনা পূর্ব্বেই মারওয়ানের সহিত সমুদয় কথাবার্ত্তা সুস্থির করিয়াছে, মারওয়ানও সমুদয় সাব্যস্ত করিয়া রাখিয়াছেন, কেবল জাএদার অভিমতের অপেক্ষা! জাএদা আজকাল করিয়া তিন দিবস কাটাইয়াছেন; আজ আবার কি বলিবেন, কি করিবেন, নির্জ্জনে বসিয়া তাহাই