জয়নাবকে দর্শন, তাহার পর পিতার নিকট মনোগত ভাব-প্রকাশ, তাহার পর মাবিয়ার রোষ—পরে আশ্বাস প্রাপ্তি, আবদুল জব্বারের জয়নাবকে পরিত্যাগ, বিবাহের কাসেদ-প্রেরণ—বিফলমনোরথ কাসেদের প্রত্যাগমন—পীড়িত পিতার উপদেশ, শরনিক্ষেপে প্রথম কাসেদের প্রাণসংহার, মোস্লেমকে কৌশলে কারারুদ্ধ করা, পিতার মৃত্যু, নিরপরাধে মোস্লেমের প্রাণদণ্ড, হাসানের সহিত যুদ্ধঘোষণা,—যুদ্ধে পরাজয়ের পর নূতন মন্ত্রনা, মায়মুনা এবং জাএদার সাহায্যে হাসানের প্রাণবিনাশ, মারওয়ানের প্রভুভক্তি, জাএদা ও মায়মুনার দামেস্কে আগমন,—প্রমোদভবনে তাহাদের স্থান-নির্দ্দেশ—এজিদ ক্রমে ক্রমে এই সকল বিষয় আলোচনা করিলেন। সুরা প্রভাবে তাঁহার মনের কপটতা দূর হইয়াছে; হিংসা, দ্বেষ শত্রুতা ঐ সময়ে অন্তর হইতে অনেক পরিমাণে বিদূরিত হইয়াছে! আজ এজিদের চক্ষে জল পড়িল। কেন পড়িল, কে বলিবে? পাষাণময় অন্তর আজ কেন কাঁদিল? কে জানিবে? কি আশ্চর্য্য! যদি সুরার প্রভাবে এখন এজিদের চিরকলুষিত পাপময় কুটিল অন্তরে সরলভাবের পবিত্রতা আসিয়া থাকে, তবে হে সুরে! তোমাকে শত শত বার নমস্কার! শত শত বার ধন্যবাদ! জগতে যদি কিছু মূল্যবান বস্তু থাকে, সেই মুল্যবান বস্তুই তবে তুমি! হে সুরেশ্বরি! পুনর্ব্বার আমি ভক্তিভরে তোমাকে শত শত ধন্যবাদ প্রদান করি! এজিদ আর এক পাত্র সুরা পান করিলেন, কোন কথা কহিলেন না; তারপর ক্ষণকাল নিস্তব্ধভাবে থাকিয়া শয্যায় শয়ন করিলেন।
প্রমোদ ভবনে জাএদা ও মায়মুনা নিদ্রিতা, রাজপ্রাসাদে এজিদ নিদ্রিত; মদিনায় হাসানের অন্তঃপুরে হাস্নেবানু নিদ্রিতা। জয়নাবও বোধ হয় নিদ্রিতা। এই কয়েকটি লোকের মনোভাব পৃথক পৃথক রূপে পর্য্যালোচনা করিলে, ঈশ্বরের অপার মহিমার একটি অপরিসীম দৃষ্টান্ত প্রাপ্ত হওয়া যায়। যদি ইঁহারা সকলেই নিদ্রিতাবস্থায় আপন আপন মনোমত ভাবের ফলানুযায়ী স্বপ্নে মাতিয়া থাকেন, তবে কে কি দেখিতেছেন? বোধ হয় জয়নাব আলুলায়িত মলিন বসনে উপাধান শূন্য মৃত্তিকাশয্যায় শয়ন করিয়া,—হাসানের জীবিত-কেশে