পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১২২

 এজিদ পুনর্ব্বার বলিতে লাগিলেন, “রজতাসন-পরিশোভিত এই বিবি জাএদার সহিত এই অঙ্গীকার করিয়াছিলাম যে, যদি ইনি স্বীয় প্রিয়তম পতির প্রাণ বিনাশ করিতে পারেন, তবে দশ সহস্র স্বর্ণমুদ্রা, মূল্যবান বস্ত্র ও মণিময় অলঙ্কার দান করিয়া ইঁহাকে রাজসিংহাসনে বসাইব।” সঙ্কেতমাত্র কোষাধ্যক্ষ দশ সহ স্বর্ণমুদ্রাপূরিত কয়েকটি রেশম বস্ত্রের থলিয়া, রত্নময় অলঙ্কার এবং কারুকার্যখচিত বিচিত্র বসন আনিয়া জাএদার সম্মুখে রাখিয়া দিল।

 কিয়ৎক্ষণ চিন্তা করিয়া এজিদ আবার বলিলেন, “যদি ইচ্ছা হয়, তবে বিবি জাএদা এই সিংহাসনে আমার বাম পার্শ্বে আসিয়া বসুন।—বিবি জাএদা! আপনি আপনার অঙ্গীকার পূর্ণ করিয়াছেন, এখন আমিও আমার অঙ্গীকার পরিপূর্ণ করি।”

 জাএদা মনে মনে ভাবিলেন: বস্ত্র, অলঙ্কার ও মোহর সকলই ত পাইয়াছি; এক রাজরাণী হওয়াই বাকী ছিল, রাজা যখন নিজেই তাঁহার বাম পার্শ্বে বসিতে আদেশ করিতেছেন, তখন সে আশাও পূর্ণ হইল। বিবাহ না হয় পরেই হইবে। রাজরাণী করিয়া আর আমাকে পরিত্যাগ করিতে পারিবেন না। এই ভাবিয়া বুদ্ধিমতী জাএদা সন্তুষ্ট হৃদয়ে রজতাসন পরিত্যাগপূর্ব্বক রাজসিংহাসনে এজিদের বাম পার্শ্বে গিয়া উপবেশন করিলেন।

 এজিদ বলিলেন, “আমার আশা পূর্ণ হইল। এক্ষণে আমার কয়েকটি কথা আছে, আপনারা সকলেই মনোযোগ পূর্ব্বক শ্রবণ করুন।” এই কথা বলিয়া এজিদ সিংহাসন ছাড়িয়া একেবারে নীচে নামিলেন। জাএদা আর তখন কি বলিয়া সিংহাসনে বসিয়া থাকিবেন, সলজ্জভাবে অতি ত্রস্তে তিনিও সিংহাসন পরিত্যাগ করিয়া সভাস্থলে এজিদের পার্শ্বদেশে আসিয়া দাঁড়াইলেন।

 এজিদের বাক্যস্রোত বন্ধ হইল। তিনি স্তম্ভিত হইয়া দাঁড়াইলেন। জাএদাকে সিংহাসন পরিত্যাগ করিতে দেখিয়া-ক্ষণকাল নীরবে থাকিয়া পুনরায় তিনি বলিতে আরম্ভ করিলেন, “আমার শত্রুকে এই বিবি জাএদা বিনাশ করিয়াছেন, আমি ইঁহার নিকটে আজীবন কৃতজ্ঞতা-ঋণে আবদ্ধ থাকিলাম। কিন্তু সামান্য অর্থ লোভে এমন প্রিয়তম নির্দোষ পতির প্রাণ যে রাক্ষসী বিনাশ করিয়াছে,