পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৩
মহরম পর্ব্ব—অষ্টাদশ প্রবাহ

তাহাকে আমি কি বলিয়া, কোন্ বিশ্বাসে আমার জীবনের চিরসঙ্গিনী, সহধর্ম্মিণী পদে বরণ করিয়া লইব, আমার প্রলোভনে ভুলিয়া যে পিশাচী এক স্বামীর প্রাণবিনাশ করিল, অন্য কাহারও প্রলোভনে ভুলিয়া সেই পিশাচী আমার প্রাণও ত অনায়াসে বিনাশ করিতে পারে? যে স্ত্রী স্বামীঘাতিনী, স্বহস্তে স্বামীর প্রাণ বধ করিতে, যে একবার নয়, দুই বার নয়, কয়েকবার বিষ দিয়া শেষবারে কৃতকার্য্য হইল,—আমি দণ্ডধর রাজা, তাহার সমুচিত শাস্তি বিধান করা কি আমার কর্ত্তব্য নহে? ইহার ভার আমি আর কাহারও হস্তে দিব না, পাপীয়সীর শাস্তি—আমি গত রাত্রে আমার শয়নমন্দিরে বসিয়া যাহা সাব্যস্ত করিয়াছি, তাহাই পালন করিব।” এই কথা বলিয়াই কটীবন্ধ সংযুক্ত দোলায়মান অসি-কোষ হইতে সুতীক্ষ তরবারি রোষভরে নিষ্কোষিত করিয়া জাএদার দিকে ফিরিয়া বলিলেন, “পাপীয়সি! স্ত্রী হইয়া স্বামীবধের প্রতিফল ভোগ কর্! প্রিয় পতির প্রাণহরণের প্রতিফল।” এই বলিয়াই কথার সঙ্গে সঙ্গেই এজিদ স্বহস্তে এক আঘাতে পাপিনী জাএদাকে দ্বিখণ্ডিত করিয়া ফেলিলেন। শোণিতের ধারা ছুটিল। এজিদের অসি জাএদার রক্তে রঞ্জিত হইল। কি আশ্চর্য্য!

 অসিহস্তে গম্ভীরস্বরে এজিদ পুনরায় বলিতে লাগিলেন, “ঐ কুহকিনী মায়মুনার শাস্তি আমি স্বহস্তে বিধান করিব না! আমার আজ্ঞায়, উহার অর্দ্ধশরীর মৃত্তিকায় প্রোথিত করিয়া প্রস্তর নিক্ষেপে মস্তক চূর্ণ করিয়া ফেল।” আজ্ঞামাত্র প্রহরীগণ মায়মুনাকে হস্তে ধরিয়া দরবারের বাহিরে টানিয়া লইয়া গেল; মাটিতে তাহার অর্দ্ধদেহ পুঁতিয়া প্রস্তর নিক্ষেপে মস্তক চূর্ণ করিল। মায়মুনার স্বপ্ন আজ সত্যই সত্য ফলিয়া গেল। সভাস্থ সকলেই “যেমন কর্ম্ম তেমন ফল” বলিতে বলিতে সভাভঙ্গের বাদ্যের সহিত সভাভূমি হইতে বহির্গত হইলেন। এজিদ হাসান-বধ শেষ করিয়া হোসেন-বধে প্রবৃত্ত হইলেন। আমরাও এই উপযুক্ত অবসরে দামেস্ক নগর পরিত্যাগ করিয়া মদিনার অভিমুখে যাত্রা করিলাম।