পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৫
মহরম পর্ব্ব—ঊনবিংশ প্রবাহ

সময়মত তিনি এজিদের সহিত সাক্ষাৎ করিলেন, মদিনার উপস্থিত বিবরণ সমুদয় এজিদের গোচর করিয়া পুনরায় মদিনা ফিরিবার কথা পাড়িলেন। প্রধান মন্ত্রী হামান যুদ্ধে অমত প্রকাশ করিয়া কয়েকদিন মারওয়ানকে মদিনা-গমনে ক্ষান্ত রাখিলেন।

 সভামণ্ডপে সকলেই উপস্থিত আছেন। মারওয়ানকে সম্বোধন করিয়া এজিদ বলিতে লাগিলেন, “মারওয়ান! আমার আশা-লতার কেবলমাত্র বীজ বপন হইয়াছে; কতকালে যে প্রস্ফুটিত পুষ্প দেখিয়া মনের আনন্দে নয়নের প্রীতি জন্মিবে, তাহা কে বলিতে পারে? এখন বিশ্রামের সময় নয়, আমোদ-আহ্লাদের সময় নয়, নিশ্চিন্তভাবে বসিয়া থাকিবারও কার্য্য নয়। অনেক কাজ রহিয়াছে;—এখনও অনেক অবশিষ্ট আছে। একটি নরসিংহের বধ করা হইয়াছে মাত্র; কিন্তু তত্তুল্য আরও একটি সিংহ বর্ত্তমান। সিংহশাবকগুলি বড় ভয়ানক! এখন আরও ভয়ানক হইয়া উঠিল জ্ঞান করিতে হইবে। এ সমুদয়কে শেষ না করিতে পারিলে আমার মনের আশা কখনই পূর্ণ হইবে না। হোসেনের রোষাগ্নি ও কাসেমের ক্রোধ-বহ্নি হইতে রক্ষা পাওয়া সহজ কথা নহে। আলি আকবর, আলি আসগার, আবদুল্লা আকবর, জয়নাল আবেদিন—ইহারা যদিও শিশু, কিন্তু পিতৃব্যবিয়োগজনিত দুঃখে কাতর না হইয়াছে, এমন মনে করিও না। ইহার প্রতিফল অবশ্যই পাইতে হইবে। তাহারা নিশ্চয়ই বুঝিয়াছে যে, যুদ্ধে পরাস্ত হইয়া জাএদার দ্বারা এই সাংঘাতিক কার্য্য করা হইয়াছে। জাএদা বাঁচিয়া থাকিলে—হাসানবংশের ক্রোধানলের কিঞ্চিৎ অংশ হইতে বাঁচিতে পারিতে, কিন্তু এখন তাহা আর হয় না। সে ক্রোধানল সম্যকরূপে এক্ষণে আমাদের শিরে পড়িয়া আমাদিগকে দগ্ধীভূত করিবে।—পূর্ব্ব হইতেই সে আগুন নির্ব্বাণের চেষ্টা করা কর্ত্তব্য। তাহারা শোকসন্তপ্ত হৃদয়ে আর কয়দিন নিরস্ত থাকিবে? মহাবীর কাসেম চিরবৈরী বিনাশ করিতে, পিতার দাদ উদ্ধার করিতে একেবারে জ্বলন্ত অগ্নিমূর্ত্তি হইয়া দাঁড়াইবে। তখন কি রক্ষা থাকিবে? আর সময় দেওয়া উচিত নহে। যত শীঘ্র হয়, হাসান-হোসেনের বংশবিনাশে যাত্রা কর। উহাদের একটিও যদি জগতে বাঁচিয়া থাকে, তবে নিশ্চয়ই জানিও, এজিদের