পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১২৬

মস্তক দ্বিখণ্ডিত হইবেই—তোমাদের শোণিতে হাসান পুত্রের তরবারি রঞ্জিত হইয়া সকলের পরমায়ু শেষ করিবেই। ঐ সকল সিংহশাবককে যুদ্ধে, কৌশলে, ছলে যে কোন উপায়ে হউক, জগৎ হইতে অন্তর না করিলে কাহারও অন্তরে আর কোন আশা নাই,—নিশ্চয় জানিবে, কাহারও নিস্তার নাই।”

 এই সকল কথা শুনিয়া প্রধান মন্ত্রী হামান গাত্রোত্থানপূর্ব্বক করজোড়ে বলিতে লাগিলেন, “রাজাজ্ঞা আমার শিরোধার্য্য! কিন্তু আমার কয়েকটি কথা আছে। অভয় দান করিলে মুক্তকণ্ঠে বলিতে পারি।”

 এজিদ বলিলেন, “তোমার কথাতেই ত কয়েকদিন অপেক্ষা করিয়াছি। যদি তুমি আমার ঐ সকল চিরশত্রু বিনাশে আমার অপেক্ষা আর কোন ভাল উপায় উদ্ভাবনা করিতে পার, কিংবা আমার বিবেচনার ত্রুটি, চিন্তার ভুল, বা যুক্তিতে দোষ বিবেচনা কর, তবে অবশ্যই বলিতে পার”

 করপুটে হামান বলিলেন, “বাদশাহ্-নামদার! অপরাধ মার্জ্জনা হউক। যে হাসান আপনার মনোবেদনার কারণ—যে হাসান আপনার মনোকষ্টের মুল, যে হাসান আপনার প্রথম বয়সের প্রণয়সুখ-ভোগের সরল পথের বিষম কণ্টক, যে হাসান আপনার নবপ্রণয়ের বাহ্যিক বিরোধের পাত্র, যে হাসান আপনার অন্তরের ভালবাসা-প্রস্ফুটিত জয়নাব-কুসুমের বিধিসঙ্গত অপহরী, যে হাসান আপনার শত্রু—সে ত এই অসীম ব্রহ্মাণ্ডে আর নাই। আপনার ব্যথিত হৃদয়ে ব্যথা দিয়া জয়নাব-রত্ন লাভকারী সেই হাসান ত আর ইহজগতে নাই! জয়নাবের হৃদয়ের ধন, অমূল্য নিধি, সুখপুষ্পের আশালতা, সেই হাসান ত আর বাহ্যজগতে জীবিত নাই! তবে আর কেন? প্রতিশোধের কিছু বাকী আছে কি? জয়নাব যেমন আপনার মনে ব্যথা দিয়া হাসানকে পতিত্বে বরণ করিয়া সুখী হইয়াছিল, তাহা অপেক্ষা সহস্রগুণ যাতনা—তাহা অপেক্ষা সহস্রগুণ মনোবেদনা সে এক্ষণে ভোগ করিতেছে। তাহার সুখতরী বিষাদ-সিন্ধুতে বিনা তুফানে আজ কয়েক দিন হইল ডুবিয়া গিয়াছে। তাহার মনোবাঞ্ছিত-স্বেচ্ছাবরিত পতিধন হইতে সে ত একেবারে বঞ্চিত হইয়াছে। তবে আর কেন?