পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১২৮

আপন পরিবার মধ্যে পরিগণিত,—ইহাই রাজনীতি এবং ইহাই রাজপদ্ধতি। এই অকিঞ্চিৎকর অস্থায়ী জগতের প্রতি অকিঞ্চিৎরূপে দৃষ্টি করাই কর্ত্তব্য। ঈশ্বরের মহিমা অপার। তিনি বিজন বনে নগর বসাইতেছেন, মনোহর নগরকে বনে পরিণত করিতেছেন; কাহাকেও হাসাইতেছেন, কাহাকেও কাঁদাইতেছেন, কাহাকেও মনের আনন্দে, মনের সুখে রাখিতেছেন, মুহুর্ত্ত সময় অতীত হইতে না হইতে আবার তদ্বিপরীত করিতেছেন, মাতঙ্গ-মস্তকে পতঙ্গের দ্বারা পদাঘাত করাইতেছেন। আজ যে অতুল ধনের অধিকারী কাল সে পথের ভিখারী। —সেই—”

 এজিদ নিস্তব্ধভাবে মনোনিবেশপূর্ব্বক সকল কথা শুনিতেছিলেন। দুষ্ট মারওয়ান প্রধান মন্ত্রী হামানের কথা শেষ হইতে না হইতেই রোষভরে বলিতে লাগিলেন, “বৃদ্ধ হইলে মানুষের যে বুদ্ধিশক্তির বৈলক্ষণ্য ঘটে, তাহা সত্য। ইহাতে যে একটু সন্দেহ ছিল, তাহা আজ আমাদের প্রধান উজীরের কথায় একেবারে দূর হইল। মহাশয়। ধন্য আপনার বক্তৃতা! ধন্য আপনার বুদ্ধি। ধন্য আপনার ভবিষ্যৎ-চিন্তা! ধন্য আপনার রাজনীতিজ্ঞতা! ধন্য আপনার বহুদর্শিতা। ধন্য আপনার প্রধান মন্ত্রিত্ব! এক ভ্রাতা শক্ত, দ্বিতীয় ভ্রাতা মিত্র,—ইহা কি কখনও সম্ভব? কোন্ পাগলে একথা না বুঝিবে? সময় পাইলেই তাহারা প্রতিশোধ লইবে। এক্ষণে তাহারা কেবল সময় আর অবসর খুঁজিতেছে। যে জয়নাবের সুখের তরী ডুবিয়া গিয়াছে বলিতেছেন, সে জয়নাবকেও কম মনে করিবেন না! আমাদের কিছু জানিতে বাকী নাই! জাএদা আমাদের পরামর্শ মত হাসানকে বিষপান করাইয়াছে। এই উপযুক্ত সময়ে যদি উহাদিগকে একেবারে সমুলে বিনাশ করা না যায়, তবে কোন না কোন সময়ে আমাদিগকে ইহার ফল ভুগিতেই হইবে। আমি দর্প করিয়া বলিতে পারি, না হয় আপনি স্মরণার্থে লিখিয়া রাখুন—হাসানের বিষপানজনিত তাহাদের রোষানল শত শিখায় প্রজ্জ্বলিত হইয়া একে একে দামেস্কের সকল লোককে দগ্ধীভূত করিবে। কার সাধ্য হোসেনের হস্ত হইতে পরিত্রাণ পায়? কার সাধ্য কাসেমের তরবারি হইতে প্রাণরক্ষা করে? এ সিংহাসন কাসেমের উপবেশনের জন্য় পরিষ্কৃত থাকিবে। আমি বিশেষ বিবেচনা করিয়া দেখিলাম,