পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩১
মহরম পর্ব্ব—বিংশ প্রবাহ

নাই। গোপন তত্ত্বে আমার কি ফল হইবে? আমি কোন গোপনীয় তত্ত্ব জানিতে চাহি না!”

 ছদ্মবেশী মারওয়ান বলিলেন, “আপনি সেই তত্ত্বের সমুদয় বৃত্তান্ত শুনিলে অবশ্যই বুঝিতে পারিবেন যে, তাহাতে কোনরূপ ফল আছে কি না।” হোসেন আগন্তুকদ্বয়ের কিঞ্চিৎ নিকটে যাইয়া বলিলেন, “ভ্রাতৃদ্বয়! নিশীথ সময়ে অপরিচিত আগন্তুকের রওজার মধ্যে আসিবার নিয়ম নাই, আপনারা বাহিরে থাকিয়াই যাহা বলার ইচ্ছা হয় বলুন।” ছদ্মবেশী মারওয়ান বলিলেন, “আপনি আমাদের কথায় যদি প্রত্যয় করেন, তবে মনের কথা অকপটে বলি। আপনার দুঃখে দুঃখিত হইয়াই আমরা ছদ্মবেশে নিশীথ সময়ে আপনার নিকটে আসিয়াছি। এজিদের চক্রান্তে জাএদা যে, কৌশলে এমাম হাসানকে বিষপান করাইয়াছেন, তাহার কোন অংশই আমাদের অজানা নাই। কি করি,কর্ণে শুনি, মনের দুঃখ মনেই রাখি, গোপনে চক্ষের জল অতি কষ্টে সম্বরণ করি! হাসানের বিষপান-বিষয় মনে হইলেই হৃদয় ফাটিয়া চতুর্দ্দিক অন্ধকার বোধ হয়! এজিদের হৃদয় লৌহনির্ম্মিত, দেহ পাষাণে গঠিত; তাহার দুঃখ কি? আমরা তাহার চাকর, কিন্তু নূরনবী মোহাম্মদের শিষ্য, আপনার ভক্ত। এই যে নিশীথ সময়ে শিবির হইতে বাহির হইয়া এতদূর আসিয়াছি, ইহাতে আমাদের কোন স্বার্থ নাই, কোন প্রকার লাভের আশা করিয়াও আমরা আসি নাই; এজিদ কৌশলে আপনার প্রাণ লইবে, ইহা আমাদের নিতান্ত অসহ্য। আমাদের অন্তরে ব্যথা লাগিয়াছে বলিয়াই আসিয়াছি।”

 হোসেন বলিলেন, “ভ্রাতা—প্রাণের একাংশ, বিশেষ অগ্রগণ্য অংশ। সেই ভ্রতাকে তাঁহারই স্ত্রীর সহায়তায় এজিদ বিষপান করাইয়া কৌশলে মারিয়াছে। ইহার উপরে আর কি কষ্ট আছে? আমার প্রাণের জন্য আমি ভয় করি না।”

 মারওয়ান বলিলেন, “প্রাণের জন্য আপনার যে কিছুমাত্র ভয় নাই, তাহা স্বীকার করি। কিন্তু আপনার প্রাণ গেলে আপনার পুত্র, কন্যা, পরিবার, হাসানের পরিবার, ইহাদের কি অবস্থা ঘটিবে, ভাবুন দেখি? দুরন্ত