পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৩২

জালেম এজিদ! সে যে কি করিবে, তাহার মনই তাহা জানে! আর বেশী বিলম্ব করিতে পারি না। আমরা যে গুপ্তভাবে এখানে আসিয়াছি, এ কথার অণুমাত্র প্রকাশ হইলে আমাদের দেহ ও মস্তক কখনই একত্র থাকিবে না। আজ ওত্‌বে অলীদ এবং মারওয়ান এজিদের আদেশ মতে এই স্থির করিয়াছে যে, এই রাত্রেই রওজা মোবারক ঘেরাও করিয়া আপনাকে আক্রমণ করিবে। পরিশেষে হাসনেবানু, জয়নাব এবং আপনার পরিবারস্থ যাবতীয় স্ত্রীলোককে বন্ধন করিয়া বিশেষ অপমানের সহিত এজিদ-সমীপে লইয়া যাইবে।”

 হোসেন একটু রোষপরবশ হইয়া বলিতে লাগিলেন, “প্রকাশ্যভাবে যদি আমার মস্তক লইতে আসে, আমি তাহাতে দুঃখিত নই। আর ভাই, ইহাও নিশ্চয় জানিও, আমি বাঁচিয়া থাকিতে ঈশ্বর-কৃপায় আমার পরিবারের প্রতি—মদিনার কোন একটি স্ত্রীলোকের প্রতি কোন নরাধম নারকী জব্‌রাণে হস্তক্ষেপ করিতে পারিবে না।”

 মারওয়ান বলিলেন, “সেই জন্যই ত আপনার শিরচ্ছেদন অগ্রে করাই এজিদের একান্ত ইচ্ছা। এজিদও জানিয়াছেন যে, হোসেন বাঁচিয়া থাকিতে আর কিছুই হইবে না। আপনি আজ রাত্রে এখানে কখনই থাকিবেন না। হাজার বলবান ও হাজার ক্ষমতাবান হইলেও পাঁচ হাজার যোদ্ধার মধ্যে আপনি একা, এক প্রাণী—কি করিবেন? আপনি এখনই এ স্থান হইতে পলায়ন করুন। মারওয়ান গুপ্ত সন্ধানে জানিয়াছে যে, আপনি এই রওজা ছাড়িয়া কোনখানেই গমন করেন না; রাত্রিও শেষ হইয়া আসিল, আর অধিক বিলম্ব নাই। বোধ হয়, এখনই তাহারা আক্রমণ করিবে। দেখুন! আপনার পরিবারগণের কুল, মান, মর্য্যাদা, শেষে প্রাণ পর্য্যন্ত এক আপনার প্রাণের উপর নির্ভর করিতেছে। আর বিলম্ব করিবেন না, আমরাও শিবিরাভিমুখে যাই, আপনি অন্য কোন স্থানে যাইয়া আজিকার যামিনীর মত প্রাণ রক্ষা করুন।”

 হাস্য করিয়া হোসেন বলিলেন, “ভাই রে! ব্যস্ত হইও না! তোমাদের এই ব্যবহারে আমি বিশেষ সন্তুষ্ট হইলাম। তোমরা এজিদের পক্ষীয়