পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৩
মহরম পর্ব্ব—বিংশ প্রবাহ

লোক হইয়া গোপনে আমাকে এমন গুপ্ত সন্ধান জানাইলে,—আশীর্ব্বাদ করি, পরলোকে ঈশ্বর তোমাদিগকে জান্নাতবাসী করিবেন। ভাই রে। আমার মরণের জন্য তোমরা ব্যাকুল হইও না, কোন চিন্তা করিও না। আমি মাতামহের নিকট শুনিয়াছি, দামেস্ক কিংবা মদিনায় কখনই কাহারও হস্তে আমার মৃত্যু হইবে না। আমার মৃত্যুর নির্দ্দিষ্ট স্থান, ‘দাস্ত-কারবালা’ নামক মহাপ্রান্তর। যতদিন পর্য্যন্ত সর্ব্বপ্রলয়কর্ত্তা সর্ব্বেশ্বর আমাকে কারবালা-প্রান্তরে না লইয়া যাইবেন, ততদিন পর্য্যন্ত কিছুতেই কোন প্রকারে আমার মরণ নাই।”

 মারওয়ান বলিলেন, “দেখুন! আপনার সৈন্যবল, অর্থবল কিছুই নাই; এজিদের সৈন্যগণ আজ নিশ্চয়ই আক্রমণ করিবে। আপনি প্রাণে মারা না যাইতে পারেন, কিন্তু আপনাকে বন্দী হইতেই হইবে! তাহাতে আর কথাটি নাই। “দাস্ত করবালা না হইলে আপনার প্রাণবিয়োগ হইবে না, এ কথা সত্য—কিন্তু এজিদের আক্রমণ হইতে রক্ষা পাইবেন কিসে? আপনার জন্যই মদিনা আক্রান্ত হইবে। মদিনাবাসীরা নানা প্রকারে ক্লেশ পাইবে। যদিও তাহারা এজিদের সৈন্যদিগকে একবার শেষ করিয়াছে, কিন্তু মারওয়ান এবার একেবারে চতুর্গুণ সৈন্য সংগ্রহ করিয়া দামেস্ক হইতে আসিয়াছে। আপনি যদি শক্রহস্তে বন্দী হন, তাহা হইলে জীয়ন্তে মৃত্যুযাতনা ভোগ করিতে হইবে। আর বেশী বিলম্ব করিতে পারি না, প্রণাম করি; আমরা চলিলাম। যাহা ভাল বিবেচনা হয়, করিবেন।”

 তাহারা চলিয়া গেল। হোসেন ভাবিতে লাগিলেন, “হায়। আজ পর্য্যন্ত এজিদের ক্রোধ উপশম হয় নাই। সবই ঈশ্বরের লীলা। ঐ লোক দুইটি যথার্থই মোমেন। এই নিশীথ সময় প্রাণের মায়া বিসর্জ্জন দিয়া পরহিতসাধনে নিঃস্বার্থভাবে এত দূর আসিয়াছে। কি আশ্চর্য্য। বাস্তবিক ইহারাই যথার্থ পরহিতৈষী। মারওয়ান পুনরায় সৈন্য সংগ্রহ করিয়া মদিনায় আসিয়াছে। কি করি—আমি যুদ্ধসজ্জা করিয়া শত্রুর সম্মুখীন হইলে মদিনাবাসীর কখনই নিরস্ত ও নিশ্চেষ্ট হইয়া বসিয়া থাকিবে না, নিশ্চয়ই প্রাণ পর্য্যন্ত পণ করিয়া আমার পশ্চাদবর্ত্তী হইবে। এখনও তাহারা শোক-