পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৭
মহরম পর্ব্ব—দ্বাবিংশ প্রবাহ

এজিদের স্বহস্তে লিখিত পত্রখানিও সে জেয়াদের সম্মুখে রাখিয়া দিল। আবদুল্লাহ্ জেয়াদ সহস্রবার পত্র-চুম্বন করিয়া ভক্তির সহিত পত্র পাঠ করিলেন। কাসেদকে বলিলেন, “তোমরা নির্দ্দিষ্ট স্থানে গিয়া বিশ্রাম কর, অদ্য়ই বিদায় করিব।”

দ্বাবিংশ প্রবাহ

 প্রণয়, স্ত্রী, রাজ্য, ধন এই কয়েকটি বিষয়ের লোভ বড় ভয়ানক। এই লোভে লোকের ধর্ম্ম, পুণ্য, সাধুতা, পবিত্রতা,—সমস্তই একেবারে সমূলে বিনাশ প্রাপ্ত হয়। অতি কষ্টে উপার্জ্জিত বন্ধু-রত্নটিও ঐ লোভে অনেকেই অনায়াসে বিসর্জ্জন দেয়। মানুষ ঐ লোভে অনায়াসেই যথেচ্ছ ব্যবহারে অগ্রসর হইতে পারে। এজিদ দামেস্কের রাজা, কুফা তাঁহার অধীন রাজ্য। হোসেনের সহিত আবদুল্লাহ্ জেয়াদের কেবলমাত্র বন্ধুত্ব-ভাব সম্বন্ধ। উপরোক্ত চারি প্রকার লোভের নিকট বন্ধুভাব সর্ব্বত্র অকৃত্রিম থাকা অসম্ভব। অধিকন্তু আবদুল্লাহ্ জেয়াদের নিকটে তাহার আশা করাও যাইতে পারে না। কারণ, আদুল্লাহ্ জোয়াদ মূর্খ ও অর্থলোভী। মুখের প্রণয়েও বিশ্বাস নাই, কার্য্যেও বিশ্বাস নাই,—লোভীও তদ্রূপ।

 আবদুল্লাহ্ জেয়াদ সেই রাত্রেই দামেস্কের দূতকে বিদায় দিলেন। তিনি শয়নগৃহে শয্যার এক পার্শ্বে বসিয়া মনে মনে বলিতে লাগিলেন, “হোসেনের প্রণয়ে লাভ কি? শুধু মুখের প্রণয়ে কি হইতে পারে?”—এইরূপ অনেক আন্দোলন করিয়া তিনি নিদ্রাভিভূত হইলেন।

 প্রধান অমাত্য, সভাসদ্ ও রাজসংক্রান্ত কর্ম্মচারিগণ কেহই এই নিগুঢ় তত্ত্বের কারণ কিছুই জানিতে পারিলেন না। কি উদ্দেশ্যে উহারা দামেস্ক হইতে আসিয়াছিল, এক দিবস অতীত না হইতেই কেনই বা পুনরায় ফিরিয়া গেল, এই বিষয় লইয়া সকলে নানা প্রকার আন্দোলন করিতে লাগিলেন।

 রজনী প্রভাত হইল। আবদুল্লাহ্ জেয়াদ রাজসিংহাসনে উপবেশন করিয়া সমুদয় সভাসদগণকে সম্বোধনপূর্ব্বক বলিতে লাগিলেন “গত রজনীতে