পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৩৮

আমি হজরত মোহাম্মদ মােস্তাফাকে স্বপ্নে দেখিয়াছি। তাঁহার হস্তে কৃষ্ণবর্ণ আষা (যষ্টি), শিরে উষ্ণীষ, অঙ্গে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শুভ্র পিরহান! আমার শিয়রে দণ্ডায়মান হইয়া তিনি বলিতে লাগিলেন, আবদুল্লাহ্ জেয়াদ, তােমাকে একটি কার্য্য করিতে হইবে। আমি স্বপ্নযােগে সেই পবিত্র পদচুম্বন করিয়া জোড়হস্তে দণ্ডায়মান থাকিলাম। নূরনবী দুঃখিত স্বরে বলিতে লাগিলেন, হাসান ভ্রাতৃহীন হইয়া আমার সমাধিক্ষেত্রে পড়িয়া নিঃসহায়রূপে দিবারাত্র ক্রন্দন করিতেছে। তুমি তাহার পক্ষ অবলম্বন কর। তুমি সাধ্যানুসারে তাহার সহায়তা কর। সৈন্যসামন্ত, ধন-জন দ্বারা হােসেনের উপকার কর। এই কথা বলিয়াই পবিত্র মূর্ত্তি অন্তর্হিত হইলেন। আমারও নিদ্রা ভাঙ্গিয়া গেল। স্বর্গীয় সৌরভে সমুদয় ঘর আমােদিত হইয়া উঠিল। সেই সময়ে আমার মনে যে অনুপম আনন্দ ও ভক্তিভাব উদয় হইল, তাহা এক্ষণে মুখে প্রকাশ করিতে আমার সাধ্য হইতেছে না। আর নিদ্রাও হইল না। তখনই কায়মনে হজরত এমাম হােসেনের প্রতি আত্মসমর্পণ করিলাম। এই রাজ্য, এই সৈন্য-সান্ত, এই ভাণ্ডারস্থ ধন-রত্ন ও মণি-মুক্তা সকলই হােসেনের, এই সিংহাসন আজ হইতে হােসেনের নামে উৎসর্গ করিয়া তাঁহাকেই ইহার যথার্থ অধিকারী করিলাম। আপনারা আজ হইতে মহামান্য এমাম হােসেনের অধীন হইলেন। আজ হইতে আমি তাঁহার আজ্ঞাবহ কিঙ্কর মাত্র থাকিলাম। অমাত্যগণ! এখনই আপনারা নগরের ঘরে ঘরে ঘােষণা করিয়া দিন যে, এ রাজ্য আজ হইতে এমাম হোসেনের অধিকৃত হইল। আবদুল্লাহ্ জেয়াদ তাঁহার আজ্ঞাবহ হইয়া রহিলেন। অধীন রাজা, রাজপ্রতিনিধি, রাজসংস্রবী,—যিনি যেখানে আছেন কিংবা রাজ্য শাসন করিতেছেন, অদ্যই তাঁহাদের নিকট এই শুভ-সংবাদ অগৌণে জ্ঞাপন করা হউক। আর তাই আমার স্বপ্নবিবরণসহ রাজ্য-পরিত্যাগের সংবাদ এমাম হােসেনের গোচর করণের জন্য মদিনায় কাসেদ প্রেরণ করা হউক। রাজা বিহনে রাজ্য শাসন হওয়া নিতান্তই কঠিন, রাজসিংহাসন শূন্য থাকাও অযৌক্তিক। যত শীঘ্র হয়, এমাম হােসেন কুফা নগরে আসিয়া রাজপাট অধিকার এবং আমার মনােবাঞ্ছা পূর্ণ করুন। ইহাও জানাইও,— যত দিন