পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৯
মহরম পর্ব্ব—দ্বাবিংশ প্রবাহ

এমাম হোসেন এই রাজসিংহাসনে উপবেশন না করিতেছেন, তত দিন প্রধান উজীর রাজকার্য্য পর্য্যালোচনা করিবেন। আমার সহিত রাজ্যের কোন সংস্রব রহিল না।”

 প্রধান উজীর নতশিরে রাজাজ্ঞা প্রতিপালন করিলেন। সকলেই হোসেনের নামে রাজভক্তির পরিচয় দিয়া শত শত আশীর্ব্বাদ প্রয়োগ করিতে লাগিলেন। আবদুল্লাহ্ জেয়াদকেও একবার সকলে ধন্যবাদ দিয়া বলিলেন, “এমন সাহসী, ধর্ম্মপরায়ণ, সরলহৃদয় ধার্ম্মিক জগতে কেহ হয় নাই, হইবেও না। এমন পুণ্যকার্য্য এ পর্য্যন্ত কেহ কোন দেশেই করে নাই। এ কথা সত্য যে, যিনি ইহকাল পরকালের রাজা, প্রাণ দিয়া তাঁহার উপকার করা সকল মুসলমানের কর্ত্তব্য। এজিদের চক্রান্তে এমাম ভ্রাতৃহারা, রাজ্যহারা—একে একে তিনি সর্ব্বহারা হইবার উপক্রম হইয়াছেন, এ সময় যিনি যত প্রকারে তাঁহার উপকার করিবেন, ঈশ্বর তাঁহাকে কোটি কোটি গুণে পুণ্যময় করিয়া পরকালের প্রধান স্বর্গে তাঁহার স্থান নির্ণয় করিয়া রাখিবেন। আপনি সৈন্যসামন্ত সহ রাজ্য-ধন এমামকে দান করিলেন, আমরা চিরকাল হইতে তাঁহার আজ্ঞানুবর্ত্তী দাসানুদাস আছি। আজ হইতে জীবন, ধন, সমস্তই হোসেনের নামে উৎসর্গ করিলাম।”

 প্রধান উজীর রাজাজ্ঞানুসারে সমুদয় কথা সর্ব্বত্র ঘোষণা করিয়া দিলেন। এবং আবদুল্লাহ্ জেয়াদের স্বপ্নবৃত্তান্ত বিস্তারিতরূপে বর্ণনা করিয়া, রাজদান সংক্রান্ত সমস্ত বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া হোসেন-সমীপে কাসেদ প্রেরণ করিলেন।

 ক্রমে সর্ব্বত্র প্রকাশ হইল যে, কুফাধিপতি আবদুল্লাহ্ জেয়াদ তাঁহার সমুদয় রাজ্য হোসনকে অর্পণ করিয়াছেন। এজিদের স্বপক্ষীয়েরা ব্যতীত সকলেই একবাক্যে আবদুল্লাহ্ জেয়াদকে শত শত ধন্যবাদ দিয়া ঈশ্বর সমীপে হোসেনের দীর্ঘায়ু ও সর্ব্বমঙ্গল প্রার্থনা করিলেন। ক্রমে মদিনা পর্য্যন্ত এই সংবাদ রটিয়া গেল।

 হোসেন পূর্ব্ব হইতে মদিনা পরিত্যাগ করিয়া কুফা নগরে আসিবার ইচ্ছা করিয়াছিলেন। কিন্তু আবদুল্লাহ্ জেয়াদ কর্ত্তৃক আদৃত না হইয়া তথায়