পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪১
মহরম পর্ব্ব—দ্বাবিংশ প্রবাহ

রাজকার্য্য পরিচালনার ভার রহিয়াছে। এমাম হোসেন কোথায় আছেন আপনারা বলুন, আমি তাঁহার নিকট যাইয়া এ সংবাদ দিব।” এক এক জন বলিতে বলিতে শত শত লোক কাসেদের অগ্র-পশ্চাতে চলিতে লাগিল। কেই আবদুল্লাহ্ জেয়াদের প্রশংসা, কেহ কেহ হোসেনের কুফাগমনজনিত দুঃখ, কেহ এজিদের দৌরাত্ম্যে হোসেন দেশত্যাগী,—এই সব কথার শাখা-প্রশাখা বাহির করিয়া পরস্পর বাদানুবাদ ও তর্ক-বিতর্ক করিতে করিতে হজরতের রওজায় উপস্থিত হইল। প্রধান প্রধান লোকেরা কাসেদের বৃত্তান্ত এমামের নিকট বিবৃত করিলেন।

 আবদুল্লাহ্ জেয়াদের পত্র পাঠ করিয়া হোসেন সেই পত্রহস্তে কাসেদ সমভিব্যাহারে নিজ ভবনের প্রবেশদ্বারে উপস্থিত হইয়া মদিনাবাসীদিগকে বলিতে লাগিলেন, “ভাই সকল! আপনারা কেন আর কষ্ট পাইতেছেন? যদি কুফার অন্নজল ঈশ্বর আমার অদৃষ্টে লিখিয়া থাকেন, তবে আপনারা আমার কৃত দোষ মার্জ্জনা করিবেন। সময়ে আমি আপনাদের প্রত্যেকের নিকট হইতে বিদায় গ্রহণ করিব। এক্ষণে এত ব্যস্ত হইবার কোন কারণই দেখিতেছি না।”

 মদিনাবাসীরা সকলেই একবাক্যে হোসেনকে আশীর্ব্বাদ করিয়া স্ব স্ব স্থানে প্রস্থান করিলেন।

 জেয়াদের পত্র লইয়া হোসেন মাননীয়া বিবি সালেমার হোজ্‌রা (নির্জ্জন স্থান) সমীপে গমন করিলেন। সংবাদ পাইয়া বিবি সালেমা হোজ্‌রা হইতে বহির্গত হইলেন। এমাম হোসেন মাতামহীর[১] পদধূলি গ্রহণ করিয়া জেয়াদের পুত্রবিবরণ প্রকাশ ও কুফা নগরে গমনপ্রসঙ্গ উত্থাপন করিলেন।

 রওজা হইতে হোসেনের আগমন-বৃত্তান্ত শুনিয়া পরিজন, আত্মীয়, বন্ধু অনেকেই বিবি সালেমার হোজ্‌রায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন।

 হোসেন সকলের নিকটেই কুফা-গমনের সঙ্কল্প প্রকাশ ও পরামর্শ জিজ্ঞাসা করায় কেহই কোন উত্তর না দিয়া নিস্তদ্ধ রহিলেন। বিবি সালেমা গম্ভীর

  1. হজরত হোসেনের আপন মাতামহী বিবি খদিজা। বিবি সালেমা হজরত মোহাম্মদের অন্য় স্ত্রী।