পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৩
মহরম পর্ব্ব—দ্বাবিংশ প্রবাহ

মদিনায় থাকিতে ইচ্ছা হইতেছে না। আপনারা আর আমায় বাধা দিবেন না। মিনতি করিয়া বলিতেছি, অনুমতি করুন, যাহাতে শীঘ্রই কুফায় যাত্রা করিতে পারি।”

 ওম্মে কুলসুম বিরক্ত হইয়া চলিয়া যাইতে যাইতে বলিলেন, “ঈশ্বর অদৃষ্টফলকে যাহা লিখিয়াছেন, তাহা রদ করিবার সাধ্য কাহারও নাই। তোমার যাহা ইচ্ছা তাহাই কর।”

 হোসেনের বন্ধুবান্ধব একমত হইয়া সকলেই তাঁহাকে কুফাগমনে নিষেধ করিলেন। প্রতিবেশিগণের মধ্যে একজন বলিলেন: মদিনার মায়া একেবারে অন্তর হইতে অন্তর করিবেন না। এজিদের ভয়ে মদিনা পরিত্যাগ নিতান্ত পরিতাপ ও দুঃখের বিষয়। তাহারা প্রকাশ্য যুদ্ধে কি করিবে? মদিনাবাসীগণের একজনেরও দেহে প্রাণ থাকিতে শত্রুগণ কি আপনার অঙ্গ স্পর্শ করিতে পারে? কাহার সাধ্য? আমাদের স্বাধীনতা, স্বদেশের গৌরব-রক্ষা—ইহা ত আছেই, তাহা ছাড়া আপনার প্রাণের জন্য এজিদের সৈন্যের সম্মুখীন হইতে আমরা কখনই পরাঙ্মুখ হইব না। আমরা শিক্ষিত নহি তাহা স্বীকার করি; কিন্তু আপনার প্রাণরক্ষার জন্য আমাদের প্রাণ শক্তহস্তে অর্পণ করিতে শিক্ষার আবশ্যক কি? আমরাও যদি শত্রুহস্তে বিনাশপ্রাপ্ত হই, তথাপি মদিনার একটি স্ত্রীলোকও জীবিত থাকিতে এজিদ আপনার অনিষ্ট সাধন করিয়া কখনও মদিনার সিংহাসনে বসিতে পারিবে না। আপনি কাহার ভয়ে, কোন্ শত্রুর শত্রুতায় মদিনা পরিত্যাগ করিবেন? আমাদের জীবন থাকিতে আমরা আপনাকে যাইতে দিব না। অবশ্য আপনার আজ্ঞার প্রতিবন্ধকতা করিতে আমাদের ক্ষমতা নাই। যদি আপনি মদিনা পরিত্যাগ করিতে নিতান্তই কৃতসঙ্কল্প হইয়া থাকেন, করুন; কিন্তু মদিনাবাসীরা আপনাকে কখনই পরিত্যাগ করিবে না। যেখানে আপনি যাইবেন, তাহারাও আপনার সঙ্গে সেইখানেই যাইবে।”

 হোসেন বলিতে লাগিলেন “ভাই সকল! এজিদের জীবনের প্রথম কার্য্যই আমাদের বংশ বিনাশ করা। যে উপায়ে হউক এজিদ আমার প্রাণবিনাশ করিবে। যখন দুই ভ্রাতা ছিলাম, তখন এজিদের সৈন্যেরা