পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৪৪

সাহস করিয়া প্রকাশ্য যুদ্ধ করিতে অগ্রসর হয় নাই। তাহারা কয়েকবার পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছে এবং আপনারাও দেখিয়াছেন। এক্ষণে আমার সাহস, বল, বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তির অনেক লাঘব হইয়াছে। কারণ, ভ্রাতৃশােকে আমি যে প্রকার দুঃখিত ও কাতর আছি, তাহা আপনারা স্বচক্ষে দেখিতেছেন। যে হৃদয় কখনও ভয়ের নাম জানিত না, শত্রনাশে যে হৃদয় কদাপি আতঙ্কিত হইত না, সেই ভয়শূন্য হৃদয় আজ ভ্রাতৃবিয়ােগ-দুঃখে সামান্য যুদ্ধের নামে আতঙ্কে কাঁপিয়া উঠিতেছে। আমার নিজের মনই যদি নিরুৎসাহ থাকিল, শত্রুভয়ে কম্পবান থাকিল, তখন কাহার উৎসাহে—কাহার উত্তেজনায় আপনারা সেই দুর্দ্দান্ত শত্রুর অস্ত্রসম্মুখে—অসংখ্য সেনার অসংখ্য অস্ত্রসম্মুখে দণ্ডায়মান হইবেন? বলুন ত, কাহর সাহায্যের উপর নির্ভর করিয়া বিধর্ম্মীর অস্ত্রাঘাতের জন্য বক্ষ বিস্তার করিয়া দিবেন? শিক্ষিত সৈন্যের তরবারির গতি কাহার প্রদত্ত উৎসাহবাক্যে প্রতিরােধ করিবেন? আমি অনেক চিন্তা করিয়া দেখিয়াছি, এক্ষণে মদিনা পরিত্যাগ করাই আমার পক্ষে শ্রেয়ঃ এবং মদিনাবাসীর পক্ষেও মঙ্গল। আমার জন্য আমি আপনাদিগকে বিপদগ্রস্ত করিতে বাসনা করি না। এজিদের হস্তে কিংবা তাহার সৈন্যের হস্তে বিধি যদি আমার জীবননাশের বিধি করিয়া থাকেন, তবে তাহা নিশ্চয়ই ঘটিবে। যেখানেই কেন যাই না, আমার প্রাণহন্তা সেইখানেই গিয়া উপস্থিত হইবে। কারণ জগদীশ্বরের কার্য্য অনিবার্য। আমার স্থানান্তরে যাওয়ার জন্য মদিনাবাসীরা ত এজিদের রােষাগ্নি হইতে রক্ষা পাইবে। তাহাই আমার পক্ষে মঙ্গল।”

 প্রতিবেশিগণের মধ্যে একজন প্রাচীন ছিলেন, তিনি বলিতে লাগিলেন, “ঈশ্বরের নিয়ােজিত কার্য্য অনিবার্য্য—এ কথা কে না স্বীকার করিবে? কিন্তু আবদুল্লাহ্ জেয়াদ হঠাৎ এইভাবে এত বড় রাজ্য আপনাকে অযাচিতে ছাড়িয়া দিল, ইহার কারণ কি? একথাও রাষ্ট্র হইয়াছে যে, এজিদপক্ষীয় কাসেদ তিনলক্ষ টাকা লইয়া কুফা নগরে জেয়াদের নিকট গিয়াছিল। জেয়াদও দামেস্কের কাসেদকে এবং তৎসমভিব্যাহারী সৈন্যচতুষ্টয়কে বিশেষ পুরস্কৃত করিয়া বিদায় করিয়াছেন। তাহার পর দিবসেই তিনি