স্বপ্নবিবরণ সভায় প্রকাশ করিয়া রাজসিংহাসন ও রাজ্য আপনাকে অর্পণ করিয়াছেন। ইহারই বা কারণ কি? যদি এজিদের মন্ত্রণায় সে অসম্মত হইবে, কি এজিদের আদেশ প্রতিপালনে অনিচ্ছুক হইবে, তবে নিঃস্বার্থ বন্ধুর চিরশত্রু-প্রেরিত কাসেদকে কেন পুরস্কৃত করিবে? কেন তাহার প্রদত্ত অর্থ নিজ ভাণ্ডারে রক্ষা করিবে? যে রাজ্য আপনার পিতা বহু পরিশ্রম করিয়াও নিষ্কণ্টকে হস্তগত করিতে পারেন নাই; কয়েকবার তাঁহাকে কুফার নগরবাসীরা যে প্রকার কষ্টে নিপাতিত করিয়াছিল—তাহা বোধ হয় আপনি পরিজ্ঞাত আছেন। এইক্ষণে কুফাধিপতি জেয়াদ হঠাৎ নূরনবী মোহাম্মদের স্বপ্নাদেশে সেই রাজ্য অকাতরে আপনাকে দান করিল, ইহাতে আমার বিশেষ সন্দেহ আছে।”
হোসেন বলিলেন, “এমন কথা মুখে আনিবেন না। আবদুল্লাহ্ জেয়াদের ন্যায় আমার প্রকৃত বন্ধু মদিনা ব্যতীত অন্য কোন স্থানেই নাই। তাঁহার গুণের কথা কত বলিব? তিনি আমার জন্য এজিদের মুণ্ডপাত করিতেও বোধ হয় কখনও কুণ্ঠিত হইবেন না। জেয়াদের বাক্যে ও কার্য্যে আমার কিছুমাত্র সংশয় হয় নাই।”
বৃদ্ধ পুনরায় বলিতে লাগিলেন, “জেয়াদের বাক্যে ও কার্য্যে আপনার কোন সংশয় হয় নাই, অবশ্য না হইতে পারে। কিন্তু আমি বলি, মানুষের মনের গতি কোন্ সময় কি হয়, তাহা যাহার মন সেও জানিতে পারে না। একটু চিন্তা করিয়া কার্য্য করায় ক্ষতি কি? আমার বিবেচনায় অগ্রে জনৈক বিশ্বাসী ও সাহসী লোককে কুফা নগরে প্রেরণ করা হউক, কুফাবাসীরা যদি কোনরূপ চক্রান্ত করিয়া থাকে, তবে তাহা অবশ্যই প্রকাশ হইবে। গুপ্ত মন্ত্রণা কয়দিন গোপন থাকিবে? একটু সন্ধান করিলে সকলই জানা যাইবে। আর জেয়াদের রাজ্যদান-সঙ্কল্প যদি যথার্থ ই হয়, তবে আপনার গমনে আমি কোন বাধা দিব না।”
হোসেন বলিলেন, “একথা মন্দ নয়, কিন্তু অনর্থক সময় নষ্ট এবং বৃথা বিলম্ব। যাহা হউক, আপনার কথা বারবার লঙ্ঘন করিব না। অগ্রে কুফায় পাঠাইতে কাহাকে মনস্থ করিয়াছেন? এমন সাহসী বিশ্বাস-পাত্র কে আছে?”