দ্বিতীয় মোস্লেম নামক জনৈক বীর পুরুষ গাত্রোত্থান করিয়া করজোড়ে কহিতে লাগিলেন, “হজরত এমামের যদি অনুমতি হয়, তবে এ দাসই কুফা নগরে যাইতে প্রস্তুত আছে। আপনি কিছুদিন অপেক্ষা করুন, আমি কুফায় যাইয়া যথার্থ তত্ত্ব জানিয়া আসি; যদি আবদুল্লাহ্ জেয়াদ সরলভাবে রাজ্যদান করিয়া থাকেন, তবে মোস্লেম আনন্দের সহিত শুভসংবাদ লইয়া ফিরিয়া আসিবে। আর যদি ইহার মধ্যে ষড়যন্ত্র থাকে, তবে বুঝিবেন, মোস্লেমের এই শেষ বিদায়। আপনার কার্য্যে মোস্লেমের প্রাণের মায়া, সংসারের আশা, সুখ-দুঃখের চিন্তা ও স্ত্রীপরিবারের শেহবন্ধনের বাসনা কিছুমাত্র মনে থাকিবে না। আজ মোস্লেম আপনার কার্য্যে জীবন উৎসর্গ করিল। এই মুহূর্ত্তেই সে কুফায় যাত্রা করিবে। এখানে অনেকেই আছেন, যাহা বলিতে ইচ্ছা করেন, বলুন! মোস্লেম সে কথার অন্যথা কিছুতেই করিবে না।”
বৃদ্ধ পুনরায় বলিলেন, “মোস্লেম ত যাইতেই প্রস্তুত। মোস্লেমের প্রতি আমার ত সম্পূর্ণ বিশ্বাসই হয়, কিন্তু একা মোস্লেমকে প্রেরণ করা যুক্তিসঙ্গত বলিয়া বোধ হয় না। শিক্ষিত হউক, কি অশিক্ষিত হউক, সৈন্যনামধারী কতিপয় লোককে মোস্লেমের সঙ্গে দিতে হইবে। বৃদ্ধের মুখে এই কথা শুনিবামাত্র নিতান্ত আগ্রহের সহিত অনেকেই যাইতে ইচ্ছুক হইলেন। অতি অল্প সময় মধ্যে এক হাজার লোক মোস্লেমের সঙ্গী হইতে সমুৎসুক হইল। কুফার রহস্যভেদ—ষড়যন্ত্রের মূলচ্ছেদ করিতে তাহারা যেন প্রাণপাত করিতে প্রস্তুত হইল। অতঃপর সমুদয় কথা সাব্যস্ত হইয়া গেলে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করিয়া মোস্লেম এক হাজার সৈন্য লইয়া কুফা নগরাভিমুখে যাত্রা করিলেন। বীরবরের দুই পুত্রও পিতার সঙ্গে চলিল।