পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ত্রয়োবিংশ প্রবাহ

 স্বার্থপ্রসবিনী গর্ভবতী আশা যত দিন সন্তান প্রসব না করে, তত দিন আশাজীবী লোকের সংশিত মানসাকাশে ইষ্টচন্দ্রের উদয় হয় না। রাত্রির পর দিন, দিনের পর রাত্রি আসিতে লাগিল। এই রকমে দিবারজনীর যাতায়াত। জেয়াদের মানসকাশে ততদিন শান্তি-চন্দ্রের উদয় হয় নাই! সর্ব্বদাই তিনি অন্যমনস্ক! সর্ব্বদাই যেন দুশ্চিন্তাতে নিমগ্ন! ইহা এক প্রকার মোহ! জেয়াদ দিন দিন, দিন গণনা করিতেছেন,ক্রমে গণনার দিন পরিপুর্ণ হইল, মদিনা হইতে কাসেদ ফিরিয়া আসিল। কুফা আগমনে হোসেনের ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এতদিন না আসিবার কারণ কি? দিনের পর দিন যাইতে লাগিল। সূর্য্যের পর চন্দ্র আসিতে লাগিল। বিনা চন্দ্রে নক্ষত্রের উদয় সম্ভব। সে দিনও ক্রমে ক্রমে উত্তীর্ণ হইল, নিশ্চয় যে দিন হোসেন আসিবেন সাব্যস্ত করিয়াছিলেন, তাহাও গত হইয়া গেল। তাহার পর পরিজন লইয়া একত্র আসিতে যে বিলম্ব সম্ভব, তাহাও গণনা করিয়া দেখা হইল! কিন্তু হোসেন আসিলেন না। জেয়াদ এই বার বড়ই ভাবিত হইলেন, দিবারাত্রই চিন্তা করিতে লাগিলেন! কি কৌশলে হোসেনকে হস্তগত করিয়া বন্দীভাবে এজিদের হাতে অর্পণ করিবেন, সেই চিন্তাই মহাপ্রবল হইল। পুনরায় মদিনায় সংবাদ পাঠাইতে মনস্থ করিয়া ভাবিলেন, “হোসেন যে বংশের সন্তান, তাহাতে তাঁহার অন্তর্যামী হইতেই বা আশ্চর্য্য কি? আমার অব্যক্ত মনোগত ভাব বোধ হয় তিনি জানিতে পারিয়াছেন। আবার সংবাদ দিয়া কি নূতন বিপদে নিপতিত হইব?” পরামর্শ স্থির হইল না। তিনি নানা প্রকার ভাবিতেছেন, এমন সময় নূতন সংবাদ আসিল, মদিনা হইতে হোসেনের প্রেরিত সহস্র সৈন্যসহ মোস্‌লেম নগরে আসিয়া উপস্থিত; রাজদরবারে আসিতে ইচ্ছুক। পরম্পরায় এই সংবাদ শুনিয়া জেয়াদ আরও চিন্তিত হইলেন। “হোসেন স্বয়ং না আসিয়া দূত পাঠাইবার কারণ কি?