পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৪৮

হইতে পারে এটি আমার প্রথম পরীক্ষা। আমার মনোগত ভাব জানিবার জন্যই হয় ত তিনি দূত প্রেরণ করিয়াছেন।”—মনে মনে এইরূপ স্থির করিয়া, সাদরে মোস্‌লেমকে অভ্যর্থনা করিয়া সভাগৃহে আনিতে তিনি প্রধান মন্ত্রীকে আদেশ করিলেন।

 মোস্‌লেম সভায় উপস্থিত হইলে জেয়াদ করজোড়ে বলিতে লাগিলেন, “দূতবর! বোধ হয়, প্রভু হোসেনের আজ্ঞাক্রমেই আপনার আগমন হইয়াছে। প্রভুর না আসিবার কারণ কি? এ সিংহাসন তাঁহার জন্য শূন্য আছে; রাজকার্য্য বহুদিন হইতে বন্ধ রহিয়াছে। প্রজাগণ, সভাসদগণ প্রভুর আগমন প্রতীক্ষায় পথপানে চাহিয়া রহিয়াছে। আমি যে চিরকিঙ্কর, দাসানুদাসেরও অনুপযুক্ত, আমিও সেই পবিত্র পদসেবা করিবার আশায় এতদিন সমুদয় কার্য্য পরিত্যগ করিয়া বসিয়া আছি! কি দোষে প্রভু আমাদিগকে বঞ্চিত করিলেন, বুঝিতে পারিতেছি না।”

 মোস্‌লম বলিলেন, “এমাম হোসেন শীঘ্রই মদিনা পরিত্যাগ করিবেন। মদিনাবাসীরা অনেক প্রতিবন্ধকতা করায় তিনি শীঘ্র শীঘ্র আসিতে পারেন নাই। আপনাকে সান্ত্বনা করিয়া আশ্বস্ত করিবার জন্যই অগ্রে আমাকে পাঠাইয়া দিয়াছেন, তিনি শীঘ্রই আসিবেন।”

 আবদুল্লাহ্ জেয়াদ পূর্ব্ববৎ করজোড়ে বলিতে লাগিলেন, “আপনি প্রভুর পক্ষ হইতে আসিয়াছেন, আমরা আপনাকে প্রভুর ন্যায় গ্রহণ করিব।” এই বলিয়া মোস্‌লেমকে রাজসিংহাসনে বসাইয়া আবদুল্লাহ্ জেয়াদ ভৃত্যের ন্যায় সেবা করিতে লাগিলেন। অমাত্যগণ, সভাসদগণ, রাজকর্ম্মচারিগণ সকলেই রীত্যনুসারে উপটোকনের সহিত নতশিরে, ভক্তিসহকারে রাজদূতকে ‘রাজা’ বলিয়া মান্য করিলেন। ক্রমে অধীন রাজগণও মর্য্যাদা রক্ষা করিয়া নূন্যতা স্বীকারে নতশিরে প্রণিপাত করিলেন।

 মোস্‌লেম কিছু দিন নির্ব্বিঘ্নে রাজকার্য্য চালাইলেন, অধীন সর্ব্বসাধারণ তাঁহার নিরপেক্ষ বিচারে আশার অতিরিক্ত সুখী হইলেন, সকলেই তাঁহার আজ্ঞাকারী। আবদুল্লাহ্ জেয়াদ সদাসর্ব্বদা আজ্ঞাবহ কিঙ্করের ন্যায় উপস্থিত থাকিয়া মোস্‌লেমের আদেশ প্রতিপালনে ভক্তির প্রাধান্য