পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৯
মহরম পর্ব্ব—ত্রয়োবিংশ প্রবাহ

দেখাইলেন। মোস্‌লেমের মনে সন্দেহের নামমাত্রও রহিল না। অনেক অনুসন্ধান করিয়াও কোন প্রকারের কপট ভাব, বা লক্ষণ, ষড়যন্ত্রের কুঅভিসন্ধি, এজিদের সহিত যোগাযোগ, কুমন্ত্রণা, এজিদের পক্ষ হইয়া বাহ্যিক প্রণয়াভাব এবং অন্তরে তদ্বিপরীত, ইহার কিছুই জানিতে পারিলেন না। জেয়াদের প্রাণের কথা দুই কর্ণ হইলে ত সন্ধানের অঙ্কুর পাইবেন? যাহা আছে তাহা জেয়াদের অন্তরেই রহিয়াছে। কুফা নগরে জেয়াদের অন্তর ভিন্ন হোসেন-সম্বন্ধীয় নিগূঢ় কথা কাহারও কর্ণে প্রবেশ করে নাই। এমন কি, জেয়াদ অন্তর হইতে সে কথা আপন মুখে আনিতেও এত সতর্কভাব অবলম্বন করিয়াছেন যে, তাহা অপরের কর্ণে যাইবার কোনই সম্ভাবনা নাই। মোস্‌লেম পরাস্ত হইলেন। তাঁহার সন্ধান ব্যর্থ হইল, চতুরতা ভাসিয়া গেল। বাধ্য হইয়া তিনি কুফার আনুপূর্ব্বিক সমস্ত বিবরণ মদিনায় লিখিয়া পাঠাইলেন,—

 “হজরত! নির্ব্বিঘ্নে আমি কুফায় আসিয়াছি। রাজা জেয়াদ সমাদরে আমাকে গ্রহণ করিয়াছেন। কোন কপটতা জানিতে পারি নাই। নগরবাসীরা এমামের নামে চিরবিশ্বস্ত এবং এমামের চিরভক্ত, লক্ষণে তাহাও বুঝিলাম! এখন আপনার যেরূপ অভিরুচি।

বশম্বদ—
মোস্‌লেম”

 হোসেন পত্র পাইয়া সন্তুষ্ট হইলেন। পুত্র, কন্যা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভ্রাতৃবধূদ্বয় প্রভৃতির সহিত ঈশ্বরের নাম করিয়া কুফায় যাত্রা করিলেন। ষষ্টি সহস্র লোক মদিনা পরিত্যাগ করিয়া হোসেনের অনুগামী হইল। এমাম হোসেন সকলের সহিত একত্র কুফাভিমুখে অগ্রসর হইতে লাগিলেন; কিন্তু এজিদের কথা মনে হইলেই তাহার মুখ সর্ব্বদা রক্তবর্ণে রঞ্জিত হইয়া উঠিত। হজরতের রওজা-আশ্রয়ে থাকার সময় কোন দিন কোন মুহূর্ত্তে অন্তরে ভয়ের সঞ্চার হয় নাই। এক্ষণে প্রতি মুহূর্ত্তে এই আশঙ্কা যে, এজিদের সৈন্য পশ্চাদ্বর্ত্তী হইয়া আক্রমণ করিলে আর নিস্তার নাই। ক্রমে দিন অতীত হইল, এগার দিনের পর হোসেনের অন্তর হইতে এজিদের ভয় ক্রমে ক্রমে দূর হইতে