পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫১
মহরম পর্ব্ব—ত্রয়োবিংশ প্রবাহ

কত লোক তন্মধ্যে রহিয়াছে, কত লোক সেই পথে যাইতেছে; চক্ষু বন্ধ করিয়া তাহারাও কুফা নগরে যাইতে অসমর্থ নহে। কিন্তু সেই সর্ব্বশক্তিমান পূর্ণ-কৌশলীর কৌশলে আজ সকলেই অন্ধ, চক্ষু থাকিতেও অন্ধ! তাঁহার যে আজ্ঞা, সেই কার্য্য; এক দিন তিনি যে আজ্ঞা করিয়াছেন, তাহার আর বৈলক্ষণ্য নাই, বিপর্য্যয় নাই, ভ্রম নাই! একবার মনোনিবেশপূর্ব্বক অনন্ত আকাশে, অনন্ত জগতে, অনন্ত প্রকৃতিতে বাহ্যিক নয়ন একেবারে নিক্ষেপ করিয়া যথার্থ নয়নে দৃষ্টিপাত কর, সেই মহাশক্তির কিঞ্চিৎ শক্তি বুঝিতে পারিবে। যাহা আমরা ধারণা করিতে পারি না, তাহা দেখিয়া একেবারে বিহ্বল হইতে হয়। তাঁহার আজ্ঞা অলঙ্ঘনীয়, বাক্য অব্যর্থ। হোসেন মহানন্দে কুফায় যাইতেছেন,—ভাবিতেছেনঃ কুফায় যাইতেছি। কিন্তু ঈশ্বর যে, তাঁহাকে পথ ভুলাইয়া বিজন বন কারবালার পথে লইয়া যাইতেছেন, তাহা তিনি কিছুতেই বুঝিতে পারিতেছেন না। কেবল তিনি কেন, ষষ্টি সহস্র লোক চক্ষু থাকিতেও যেন অন্ধ!

 আবদুল্লাহ্ জেয়াদের সন্ধানী অনুচর গোপনে তাঁহার নিকট যাইয়া সংবাদ দিল যে, এমাম হোসেন মদিনা হইতে ষষ্টি সহস্র সৈন্য সঙ্গে করিয়া কুফায় আসিতেছিলেন, পথ ভুলিয়া ঘোর প্রান্তর কারবালাভিমুখে যাইতেছেন। আবদুল্লাহ্ জেয়াদ মহাসন্তুষ্ট হইয়া শুভসংবাদবাহী আগন্তুক চরকে যথোপযুক্ত পুরস্কৃত করিয়া বলিলেন, “তোমাকেই আজ কাসেদ-পদে বরণ করিয়া দামেস্কে পাঠাইতেছি।”

 আবদুল্লাহ্ জেয়াদ এজিদের নিকট পত্র লিখিলেন, “বাদশাহের অনুগ্রহে দাসের প্রাণদান হউক! আমি কৌশল করিয়া মোহাম্মদের রওজা হইতে এমাম হোসেনকে বাহির করিয়াছি। বিশ্বস্ত গুপ্ত সন্ধানী অনুচর-মুখে সন্ধান পাইলাম যে, এমাম হোসেন কুফা নগরের পথ ভুলিয়া ‘দাস্ত কারবালা’ অভিমুখে যাইতেছেন। তাঁহার পূর্ব্ব-প্রেরিত সাহসী মহাবীর মোস্‌লেমকে কৌশলে বন্দী করিয়া রাখিয়াছি। এই অবসরে হোসেনের পশ্চাৎ পশ্চাৎ কতকগুলি ভাল ভাল সৈন্য প্রেরণ করা নিতান্ত আবশ্যক। ওত্‌বে অলীদকে কুফার দিকে সৈন্যসহ পাঠাইলে, তাহারা প্রথমে মোস্‌লেমকে মারিয়া, পরে হোসেনের পশ্চাদ্‌বর্ত্তী হইয়া