পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৫২

তাঁহাকে আক্রমণ করিবে। প্রথমে মোস্‌লেমকে মারিতে পারিলে হোসেনের মস্তক দামেস্কে পাঠাইতে আর কোন বিঘ্ন হইবে না, ক্ষণকাল বিলম্বও হইবে না।”

 আবদুল্লাহ্ জেয়াদ স্বহস্তে পত্র লিখিয়া গুপ্তসন্ধানী অনুচরকে কাসেদপদে নিযুক্ত করিয়া দামেস্কে পাঠাইলেন; এদিকে মোস্‌লেমের নিকট দিন দিন আরও নূন্যতা স্বীকার করিয়া তাঁহার যথোচিত সেবা করিতে লাগিলেন এবং সময়ে সময়ে হোসেনের আগমনের বিলম্বজনিত বাহ্যিক দুঃখে নানাপ্রকার দুঃখ প্রকাশ করিয়া মোস্‌লেমকে নিশ্চিন্ত রাখিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন।

 আবদুল্লাহ্ জেয়াদ প্রেরিত কাসেদ পুরস্কার লোভে দিবারাত্র পরিশ্রম করিয়া দামেস্কে পৌঁছিলেন। দামেস্কাধিপতি এজিদ কাসেদের পরিচয় পাইয়া—সমুদয় বৃত্তান্ত নির্জ্জনে অবগত হইয়া, মহানন্দে কাসেদকে যথোচিত পুরস্কার দিয়া, প্রধান প্রধান সৈন্য ও সৈন্যাধ্যক্ষকে আহ্বান-পূর্ব্বক বলিতে লাগিলেন, “এত দিনের পর আমার পরিশ্রমের ফল ফলিয়াছে। আবদুল্লাহ্ জেয়াদ কৌশল করিয়া হোসেনকে মদিনা হইতে বাহির করিয়াছেন, তোমরা এখনই প্রস্তুত হইয়া হোসেনের অনুসরণ কর। মরুস্থল কারবালার পথে যাইলে, পলাতক হোসেনের দেখা পাইবে। যদি পথের মধ্যে আক্রমণ করিবার সুযোগ না হয়, তবে একেবারে নির্দ্দিষ্ট স্থানে যাইয়া অগ্রে ফোরাত নদীর পূর্ব্বকূল বন্ধ করিবে। মদিনা হইতে কুফা পর্য্যন্ত গমনোপযোগী জল সর্ব্বদা সংগ্রহ করা সহজ মনে করিয়া হোসেন মদিনা পরিত্যাগ করিয়াছেন। সঙ্গেও ষষ্টি-সহস্র লোক। ইহাদের পানোপযোগী জল সর্ব্বদা সংগ্রহ করা সহজ কথা নহে। তোমাদের প্রথম কার্য্যই হইল, কারবালার ফোরাত নদীর কূল আবদ্ধ করিয়া রাখা। হোসেন পক্ষীয় একটা প্রাণীও যেন ফোরাতকূলে আসিতে না পারে, ইহার বিশেষ উপায় করিতে হইবে। দিবারাত্র সদাসর্ব্বদা সতর্কভাবে থাকিবে, যেন কোন সময়ে, কোন সুযোগে, এক পাত্র জলও হোসেনের, কি তৎসঙ্গীয় কোন লোকের, আশু প্রাপ্য না হয়। বারি-রোধ করিতে পারিলেই তোমাদের কার্য্য সিদ্ধ হইবে। হোসেনের মস্তক যে ব্যক্তি এই দামেস্কে আনিয়া আমার সম্মুখে উপস্থিত করিবে, তৎক্ষণাৎ তাহাকে লক্ষ মুদ্রা পুরস্কার দিব এবং বিজয়ী সৈন্যদিগের নিমিত্ত দামেস্কের রাজভাণ্ডার