পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৫৪

করিয়া কুফা নগরে মোস্‌লেমকে আক্রমণ করিবার জন্য আদেশ প্রদান করিলেন। সংবাদবাহক সংবাদ লইয়া যাইবার পূর্ব্বেই ওত্‌বে অলীদ ও মারওয়ান সৈন্যসহ হোসেনকে অনুসরণ করিতে কুফার পথে যাত্রা করিয়াছিলেন। পথিমধ্যে দামেস্কের কাসেদ-মুখে সমুদয় বৃত্তান্ত অবগত হইয়া অলীদ এবং মারওয়ান অবিশ্রান্তভাবে কুফাভিমুখে সৈন্য-সমভিব্যাহারে যাইতে লাগিলেন। দিবারাত্র পরিশ্রম করিয়া বুদ্ধির অগম্য, চিন্তার বহির্ভূত—অল্প সময়ের মধ্যে কুফার নিকটবর্ত্তী হইলে জেয়াদের অনুচরেরা তাঁহার নিকট সংবাদ দিল, “মহারাজ এজিদের সৈন্যাধ্যক্ষ মারওয়ান ও ওত্‌বে অলীদ সৈন্যসহ নগরপ্রান্তে উপস্থিত হইয়াছেন,—কি কর্ত্তব্য?”

 জেয়াদ এতৎ সংবাদে মহাসন্তুষ্ট হইয়া মোস্‌লেম-সমীপে যাইয়া করজোড়ে বলিতে লাগিলেন, “বাদশাহ্-নামদার! এজিদের প্রধান সৈন্যাধ্যক্ষ মহাবীর মারওয়ান এবং ওত বে অলীদ কুফার অতি নিকটবর্ত্তী হইয়াছে। বোধ হয়, অদ্যই নগর আক্রমণ করিবে। প্রভু হোসেনের আশায় এত দিন রহিলাম, তিনি ত আসিলেন না; শত্রুপক্ষ নগরর-সীমার নিকটবর্ত্তী, এক্ষণে কি আদেশ হয়?”

 মোস্‌লেম বলিলেন, “আমরা এমন কাপুরুষ নহি যে, শত্রুর অস্ত্রের আঘাত সহ্য করিয়া নগর রক্ষা করিব। আমি এখনই আমার সঙ্গী সৈন্য লইয়া মারওয়ানের গতিরোধ করিব এবং নগর আক্রমণে বাধা দিয়া তাহাদিগকেই আক্রমণ করিব। আপনি যত শীঘ্র পারেন, কুফার সৈন্য লইয়া আমার পশ্চাদ্বর্ত্তী হউন। সৈন্যসহ আপনি আমার পশ্চাদ্-রক্ষক থাকিলে ঈশ্বরের কৃপায় আমি সহস্র মারওয়ানকে অতি তুচ্ছ জ্ঞান করি।” এই কথা বলিয়াই মোস্‌লেম মদিনার সৈন্যগণকে প্রস্তুত হইতে অনুমতি-সঙ্কেত করিলেন। মদিনাবাসীরা এজিদ ও এজিদের সৈন্য়-শোণিতে তরবারি রঞ্জিত করিতে সদাসর্ব্বদা প্রস্তুত। মোস্‌লেমের সাঙ্কেতিক অনুমতি, মারওয়ানের সহিত যুদ্ধের অনুমাত্র প্রসঙ্গ পাইয়াই সৈন্যগণ “মার মার” শব্দে শ্রেণীবদ্ধপূর্ব্বক মোস্‌লেমের সম্মুখে দণ্ডায়মান হইল। সৈন্যদিগের উৎসাহ দেখিয়া মোস্‌লেম দ্বিগুণ উৎসাহে অশ্বে আরোহণ করিলেন এবং মুহূর্ত্তমধ্যে সৈন্যশ্রেণী শ্রেণীবদ্ধপূর্ব্বক নগরের বাহির