পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৫৬

কৌশলে মোস্‌লেমকেও নগরের বাহির করিয়া মহারাজ এজিদের সৈন্যের সম্মুখীন করিয়া দিলাম, রাজাজ্ঞা প্রতিপালিত হইল। আমাদের নগরের বাহিরে কোন প্রয়োজন নাই। আমরা যুদ্ধে যাইব না, মোস্‌লেমের সহায়তাও করিব না। নগরতোরণ আবদ্ধ কর,—বলবান সাহসী সৈনিক পুরুষ নগরতোরণ রক্ষা করুক। মোস্‌লেমের বাঁচিবার সাধ্য নাই। ওত্‌বে অলীদের অস্ত্রের সম্মুখীন হইলেই মোস্‌লেমকে ইহজগৎ পরিত্যাগ করিতে হইবে। তথাপি যদি মোস্‌লেম যুদ্ধে পরাস্ত হইয়া প্রাণরক্ষার জন্য নগরে আশ্রয় লইতে নগরদ্বারে উপস্থিত হয়, কিছুতেই নগরমধ্যে প্রবেশ করিতে দিবে না!” সৈন্যাধ্যক্ষ এবং সৈন্যগণ আবদুল্লাহ্ জেয়াদের বাক্যে একেবারে অবাক হইয়া রহিল! জেয়াদের মনে এত চাতুরী, এত ছলনা, এত প্রতারণা! ইহাতে তাহারা—আরও আশ্চর্যান্বিত হইল। কিন্তু কি করিবে, নগর-দ্বার রুদ্ধ করিয়া দ্বারের নিকটবর্ত্তী স্থানেই সৈন্যগণের সহিত সকলেই একত্র হইয়া রহিল।

 ওত্‌বে অলীদ মোস্‌লেমকে দেখাইয়া সৈন্যগণকে বেগে অগ্রসর হইতে আদেশ করিলেন। মোস্‌লেম ওত্‌বে অলীদের আক্রমণে বাধা দিয়া বিশেষ পারদর্শিতার সহিত ব্যূহ রচনা করিয়া শত্রুসম্মুখে সৈন্যদিগকে দণ্ডায়মান করাইলেন। কিন্তু আক্রমণ করিতে আর সাহসী হইলেন না, আত্মরক্ষাই আবশ্যক মনে করিলেন। কুফার সৈন্য কত নিকটবর্ত্তী হইয়াছে, তাহা দেখিতে পশ্চাতে ফিরিয়া যাহা দেখিলেন, তাহাতে মোস্‌লেমের মস্তক ঘুরিয়া গেল। জনপ্রাণী মাত্র নাই, তথাপি নগরতোরণ বদ্ধ—মোস্‌লেম একেবারে হতবুদ্ধির ন্যায় হইয়া নগরের দিকে বার বার চাহিয়া দেখিলেন, পূর্ব্ব প্রকারেই নগরদ্বার বদ্ধ রহিয়াছে। তখন নিশ্চয়ই তিনি মনে মনে জানিলেন যে, এ সকল জেয়াদের চাতুরী! চতুরতা করিয়া সে তাঁহাকে নগরের বাহির করিয়াছে! এখন তিনি নিশ্চয়ই জানিলেন যে, জেয়াদের মনে নানাপ্রকার দুরভিসন্ধি ছিল; হোসেনবধের জন্যই এই মায়াজাল বিস্তার,—তাহাতে আর সন্দেহ নাই। ‘ভালই হইয়াছে, কুফায় আসিলে হজরত যে প্রকারে বিপদগ্রস্ত হইতেন, তাহা আমার ভাগ্যেই ঘটিল। মোস্‌লেমের প্রাণ যাইয়াও যদি হোসেনের প্রাণ রক্ষা হয় তাহাও মোস্‌লেমের পক্ষে সার্থক।’—মনে মনে তিনি এই কথা বলিলেন।