পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৫৮

আক্রমণ করিলেন। ভয়ানক যুদ্ধ আরম্ভ হইল। মোস্‌লেমের জীবনের আশা নাই, তাঁহার সৈন্যগণ বিধর্ম্মীর হস্তে মরিবে—সেই আশায় তিনি কেবল মারিতেই লাগিলেন; ভবিষ্যৎ জ্ঞান, পশ্চাৎ লক্ষ্য, পার্শ্বে দৃষ্টি ইত্যাদির প্রতি কিছুই লক্ষ্য রাখিলেন না। মহাবীর মোস্‌লেম দুই হস্তে তরবারি ধরিলেন, অশ্ববল্গা দন্তে ধারণ করিলেন এবং শত্রুসৈন্য অকাতরে কাটিয়া চলিলেন। মধ্যে মধ্যে “আল্লাহো আকবর” নিনাদে তিনি দ্বিগুণ উৎসাহে সৈন্যদিগকে উৎসাহিত করিলেন। ওত বে অলীদ ও মারওয়ান বহু পরিশ্রম ও বহু চেষ্টা করিয়াও মোস্‌লেমের লঘুহস্তচালিত চপলবৎ তরবারির সম্মুখে আর তিষ্ঠিতে পারিলেন না। ক্ষণকাল মধ্যে সৈন্যগণ ছত্রভঙ্গ হইয়া দিগ্বিদিক পলাইতে লাগিল। মোস্‌লেমের সৈন্যগণও ঐ পলায়িত শত্রুর পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবিত হইয়া দেহ হইতে বিধর্ম্মীর মস্তক মৃত্তিকাশায়ী করিতে লাগিল।

 আবদুল্লাহ্ জেয়াদ নগরতোরণের উপরিস্থ অতি উচ্চ মঞ্চে উঠিয়া উভয় দলের যুদ্ধ দেখিতেছিলেন; দেখিতেছিলেন, মোস্‌লেমের তরবারীর সম্মুখে কেহই অগ্রসর হইতে পারিতেছে না। বহুতর সৈন্য মৃত্তিকাশায়ী হইয়াছে। যাহারা জীবিত আছে তাহারাও প্রাণভয়ে দিশাহারা হইয়া পলাইতেছে। জেয়াদ মঞ্চ হইতে নামিয়াই দ্বাররক্ষককে বলিলেন, “দ্বার খুলিয়া দাও"; সৈন্যগণকে আদেশ করিলেন, “আমার পশ্চাদ্‌বর্ত্তী হইয়া মোস্‌লেমকে আক্রমণ কর, আমরা সাহায্য না করিলে ওত্‌বে অলীদের প্রাণ কখনই রক্ষা হইবে না।”

 রাজাজ্ঞা প্রাপ্তি মাত্রই লক্ষাধিক সৈন্য জয়নাদে তুমুল শব্দ করিয়া পশ্চাদ্দিক হইতে মোস্‌লেমকে আক্রমণ করিল। আবদুল্লাহ্ জেয়াদ স্বয়ং যুদ্ধে আসিয়াছেন, মোস্‌লেমের সেদিকে দৃষ্টিপাত নাই, কেবল অশ্ববল্গা দন্তে ধারণ করিয়া দুই হস্তে বিধর্ম্মী নিপাত করিতেছেন। তিনি যাহাকে যে অবস্থায় পাইতেছেন, সেই অবস্থায়ই তাহার দেহ হইতে মস্তক ছিন্ন করিতেছেন; কাহাকেও বা অশ্ব সহিত একচোটে দ্বিখণ্ডিত করিয়া জন্মশোধ তাহার যুদ্ধের সাধ মিটাইতেছেন।

 আবদুল্লাহ জেয়াদ পশ্চাদ্দিক হইতে মোস্‌লেমকে আক্রমণ করিবার উপক্রম করিতেই ওত্‌বে অলীদ উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন, “মোস্‌লেম! ঈশ্বরের