পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৯
মহরম পর্ব্ব—ত্রয়োবিংশ প্রবাহ

নাম মনে কর; তোমার সাহায্যের জন্য আবদুল্লাহ্ জেয়াদ লক্ষাধিক সৈন্য লইয়া আসিতেছেন।”

 মোস্‌লেম জেয়াদের নাম শুনিয়া চমকিতভাবে পশ্চাতে ফিরিয়া যাহা দেখিলেন, তাহাতে আর কিছুই বলিলেন না; কেবলমাত্র বলিলেন “বিধর্ম্মীর কথায় যে বিশ্বাস করিবে, কাফেরের ভক্তিতে যে মুসলমান ভুলিবে, তাহার দশাই এইরূপ ঘটিবে?” মোস্‌লেম ভীত হইলেন না, যুদ্ধে ক্ষান্ত দিয়াও পরাজয় স্বীকার করিলেন না, পূর্ব্বমত বিধর্ম্মী-শোণিতে মৃত্তিকা রঞ্জিত করিতে লাগিলেন। কিন্তু তাহাতে কোনই ফল হইল না। চতুর্দ্দিক হইতে অবিশ্রান্তভাবে মোস্‌লেমের শরীরে শর বিদ্ধ হইতে লাগিল; সর্ব্বাঙ্গে শোর্ণিতধারা ছুটিল। অশ্বপদতলে বিধর্ম্মীর রক্তস্রোত বহিতেছে, যুদ্ধক্ষেত্র মনুষ্যদেহে পরিপূর্ণ হইয়াছে, শোণিতসিক্ত মৃত্তিকায় ক্ষিপ্রগামী মোস্‌লেম শত্রুক্ষয় করিতে নিবৃত্ত হইতেছেন না। শত্রুসৈন্য এত মারিতেছেন, কিন্তু কিছুতেই তাহার শেষ হইতেছে না। দিন মণিও সমস্ত দিনএই ঘোরতর যুদ্ধ দেঘিয়া লোহিতবর্ণে অস্তমিত হইলেন। তৎসঙ্গেই ইসলামগৌরব-রবি মহাবীর মোস্‌লেমও লোহিত বসনে আবৃত হইয়া জগৎ অন্ধকার করিয়া শত্রুহস্তে প্রাণবিসর্জ্জন দিয়া স্বর্গবাসী হইলেন। মদিনার একটি প্রাণীও আর বিধর্ম্মীর অস্ত্র হইতে রক্ষা পাইল না।

 যুদ্ধাবসনে নরপতি জেয়াদ দর্পের সহিত বলিতে লাগিলেন,—“মদিনার শত্রুকুল,—মহারাজ এজিদ-নামদারের নামের বলেই এরূপে নির্ম্মূল হইবে। যেরূপ চিন্তা করিয়া কৌশলজাল বিস্তার করিয়াছিলাম, তাহাতে বাদশাহ নামদারের মহাশত্রু আজ সবংশে বিনষ্ট হইত, দৈববিপাকে তাহা হইল না। মোস্‌লেমের যে দশা ঘটিল, প্রধান শত্রু হোসেনকেই সেই দশায় পতিত হইতে হইত। দামেস্ক ও কুফার সৈন্যের তরবারিধারে হোসেন-মস্তক নিশ্চয়ই দেহবিচ্ছিন্ন হইত। পরিবার, পরিজন, সঙ্গীরাও আজ কুফার সিংহদ্বায়ের সম্মুখস্থ প্রান্তরে রক্তমাখা হইয়া গড়াগড়ি যাইত। ভাগ্যক্রমে হোসেন ষষ্টি সহস্র লোকজনসহ কুফার পথ ভুলিয়া কারবালার পথে গিয়াছে; জেয়াদের হস্ত হইতে রক্ষা পাইয়াছে। সম্পূর্ণরূপে সর্ব্বাংশে যশঃ লাভ করিতে পারিলাম