পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৬০

না; ইহাই আমার নিদারুণ আক্ষেপ, মদিনার একটি প্রাণীও আজ কুফার সৈন্যগণের হস্তে রক্ষা পায় নাই, সমুদয় শেষ হইয়া যমালয়ে গমন করিয়াছে। একটি প্রাণীও পলাইতে পারে নাই। ধন্য কুফার সৈন্য!”

 গুপ্তচর, গুপ্তসন্ধানীগণ মধ্য হইতে একজন বলিল,—“ধর্ম্মাবতার। মোস্‌লেমের দুই পুত্র মারা যায় নাই, ধরা পড়িয়া বন্দীও হয় নাই। তাহারা যুদ্ধাবসানে যুদ্ধক্ষেত্র হইতে অতি ত্রস্তপদে নগরের মধ্যে প্রবেশ করিয়াছে। কি কৌশলে যে তাহারা কুফার সৈন্যগণের চক্ষে ধূলি দিয়া প্রাণ বাঁচাইল, আর এ পর্য্যন্ত যে জীবিত আছে,—ইহই আশ্চর্য্য! মহারাজ!—তাহারা দুই ভ্রাতা এই নগরেই আত্মগোপন করিয়া রহিয়াছে। আমরা বিশেষ সন্ধানে জানিতে পারিয়াছি, তাহারা নগরের বাহিরে যায় নাই;—যাইতে পারে নাই।”

 আবদুল্লাহ্ জেয়াদ অতি ব্যস্তভাবে বলিতে লাগিলেন,—“সে কি কথা? মোস্‌লেমের পুত্রদ্বয় জীবিত আছে?” অমাত্যগণকে সম্বোধন করিয়া তিনি কহিলেন, “ওহে! এ কি ভয়ানক কথা? ভুজঙ্গ হইতে ভুজঙ্গশিশুর বিষ যে অত্যধিক মারাত্মক তাহা কি তোমরা জান না? এখনই ডঙ্কা বাজাইয়া ঘোষণা প্রচার কর। নগরের প্রতি রাজপথে, ক্ষুদ্র পথে, প্রকাশ্য স্থানে, নগরবাসীর প্রতি দ্বারে ডঙ্কা, দুন্দুভি, ভেরী বাজাইয়া ঘোষণা করিয়া দাও,যে ব্যক্তি মোস্‌লেমের পুত্রদ্বয়কে ধরিয়া আমার নিকট আনিতে পারিবে, সে সহস্র সুবর্ণ মুদ্রা তৎক্ষণাৎ পারিতোষিক পাইবে। আর যে ব্যক্তি মোস্‌লেমের পুত্রদয়কে আশ্রয় দিয়া গোপনে রাখিবে—প্রকাশমাত্র, বিচার নাই—কোন কথা জিজ্ঞাস্য নাই, দ্বিতীয় আদেশের অপেক্ষা নাই,—শূলদণ্ডই হইবে তাহার জীবনের সহচর। শূলদণ্ডকেই চির আলিঙ্গন করিয়া—প্রাণের সহিত আলিঙ্গন করিয়া মজ্জাভেদে তাহাকে মরিতে হইবে।”

 আদেশমত তখনই ঘোষণা প্রচার হইল—নগরময় ঘোষণা প্রচার হইল। কত লোক অর্থলোভে পিতৃহীন বালকদ্বয়ের অন্বেষণে ছুটিল, নানা স্থানে খুঁজিতে আরম্ভ করিল। তাহারা পাহাড়, পর্ব্বত, বন, জঙ্গল, মাঠ, ঘাট চারিদিকে সন্ধান করিয়া বাস্তভাবে ছুটাছুটি করিয়া বেড়াইতে লাগিল।

 মোস্‌লেমের পুত্রদ্বয় ঘোযণা প্রচারের পূর্ব্বেই এক ভদ্রলোকের আশ্রয়-