পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬১
মহরম পর্ব্ব—এয়ােবিংশ প্রবাহ

বাটিতে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন। সে ভদ্রলোকটি কুফা নগরের বিচারপতি (কাজী); তিনি বালকদ্বয়ের দুঃখে দুঃখিত হইয়া তাহাদিগকে পরিতোষরূপে আহার করাইয়া শয়নের ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছেন। মহাবীর মোস্‌লেমের জন্য আক্ষেপ করিতেছেন। ইতিমধ্যে ঘোষণার বিবরণ শুনিয়া কাজী সাহেব নিতান্তই দুঃখিত হইলেন। কি করেন! কি উপায়ে পিতৃহীন বালক দুইটির প্রাণ রক্ষা হইতে পারে, তিনি তাহারই সুযোগ-সুবিধা খুঁজিতেছেন, চিন্তা করিতেছেন! বহু চিন্তার পর সঙ্কল্প স্থির করিয়া তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র ‘আসাদ’কে ডাকিয়া তিনি বলিলেন, “প্রাণাধিক পুত্র! দেখ—এই পিতৃহীন বালক দুইটির প্রাণ রক্ষার উপায় করিতে হইবে। ঘোষণার বিষয় ত শুনিয়াছ। সাবধানে সতর্কে নিশীথ সময়ে বালকদ্বয়কে সঙ্গে করিয়া লইয়া নগরের প্রবেশদ্বার পার হইবে। কিছুক্ষণ মদিনার পথে দাঁড়াইলেই মদিনার যাত্রীদল অবশ্যই দেখিতে পাইবে। বহু যাত্রীদলই প্রতি রাত্রে গমন করে, অদ্যও করিবে, তাহাদের কোন এক দলের সহিত বালকদ্বয়কে সঙ্গী করিয়া দিলেই ‘কাফেলায়’ মিশিয়া নিরাপদে উহারা মদিনায় যাইতে পারিবে। বালক দুইটিরও প্রাণ রক্ষা হইবে, আমরাও নরপতি জেয়াদের ঘোষণা হইতে রক্ষা পাইব।” কাজী সাহেব এই কথা বলিয়াই প্রতি ভ্রাতার কোমরে পঞ্চাশটি করিয়া মোহর বাঁধিয়া দিলেন এবং খাদ্যসামগ্রী পরিমাণ মত যাহা তাহারা অনায়াসে লইয়া যাইতে পারে, উভয় ভ্রাতার সঙ্গে তাহাও দিয়া দিলেন।

 কাজী সাহেবের পুত্র আসাদ, পিতৃহীন বালকদ্বয়কে সঙ্গে করিয়া নিশীথ সময়ে গৃহ হইতে বহির্গত হইলেন। সাবধানে সতর্কে নগরের সিংহদ্বার পার হইয়া দেখিলেন, একদল যাত্রী মদিনাভিমুখে যাইতেছে, কিন্তু তাহারা কিঞ্চিৎ দূরে গিয়া পড়িয়াছে।

 আসাদ বলিলেন,—“ভ্রাতৃগণ! দেখিতেছ? ঐ মদিনার যাত্রীদল যাইতেছে, এমন সুযোগ-সুবিধা আর না-ও পাওয়া যাইতে পারে। ঐ যে যাত্রীদল যাইতেছে, তোমরা খোদার নাম করিয়া ঐ দলে মিশিয়া চলিয়া যাও। ঐ যাত্রীদলে মিশিতে পারিলে আর ভয়ের কোন কারণ থাকিবে না।