পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৬২

তোমাদিগকে এলাহীর হস্তে সঁপিলাম। যাও ভাই! আর বিলম্ব করিও না। শীঘ্র যাও। ভাই সালাম!”—আসাদ বিদায় লইলেন। ভ্রাতৃদ্বয় ত্রস্তপদে মদিনার যাত্রীদলের পশ্চাৎ অনুসরণ করিয়া যাইতে লাগিলেন। রজনী ঘোর অন্ধকার। বালুকাময় পথ। তদুপরি প্রাণের ভয়, দুই ভাই একত্রে দৌড়াইতে লাগিলেন,—অগ্রগামী কাফেলার দিক লক্ষ্য করিয়া দৌড়াইতে লাগিলেন।

 জগৎকারণ জগদীশ্বরের মহিমার অন্ত নাই! ভ্রাতৃদ্বয় দৌড়াইতে দৌড়াইতে মদিনার পথ ভুলিয়া পুনরায় নগরের দিকে-কুফা নগরের দিকেই আসিতে লাগিলেন। তাঁহারা মনে মনে আশা করিয়াছিলেন, যাত্রীদল বেশী দূর যায় নাই, এখনই তাহাদের সঙ্গে যাইয়া দলে মিশিতে পারিবেন। কিন্তু আশা করিলে কি হয়? মানুষের সব আশা পূর্ণ হয় কি? অদৃষ্টফেরে পথ ভুলিয়া অন্য পথে কুফা নগরের দিকেই যে আসিতেছেন, দুই ভাই এ দৈব ঘটনার কিছুই বুঝিতে পারিতেছেন না। ত্রস্তপদে যাইতে যাইতে তাঁহারা সম্মুখে দেখিলেন,— মশালের আলো। তাঁহারা আলো লক্ষ্য করিয়া দৌড়াইলেন; সেখানে যাইয়া দেখেন—যাত্রীদল নহে, রাজকীয় প্রহরীদল অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত, প্রত্যেকের হস্তেই জ্বলন্ত মশাল। প্রহরীদিগের সম্মুখে পড়িতেই তাহারা বালকদ্বয়কে দেখিয়াই, আকার-প্রকারে তাহাদের রূপের ছটা দেখিয়াই, যাহা বুঝিবার বুঝিয়া লইল। আর কি যাইবার সাধ্য আছে? তাহারা তাহাদিগকে ধরিয়া ফেলিল এবং পুরস্কার-লোভে অগ্রে শহর-কোটালের নিকট লইয়া উপস্থিত করিল। নগরপাল কোটাল উভয় ভ্রাতার আকার-প্রকার দেখিয়াই বুঝিয়া লইলেন—এই বালকদ্বয়ই বীরবর মোস্‌লেমের হৃদয়ের সার, প্রিয় আত্মজ। নগরপাল ভ্রাতৃদ্বয়ের রূপলাবণ্য দেখিয়া যত্নপূর্ব্বক তাহাদিগকে আপন গৃহে রাখিলেন এবং অতি প্রত্যুষে তাহাদিগকে মহারাজ জেয়াদের দরবারে উপস্থিত করিলেন।

 কুফাধিপতি মোস্‌লেমের তনয়দ্বয়ের রূপলাবণ্য, মুখশ্রী, কিঞ্চিৎ কৃষ্ণ কেশের নয়নরঞ্জন দৃশ্য দেখিয়া “শিরচ্ছেদ কর”—এ কথাটি আর মুখে উচ্চারণ করিতে পারিলেন না; মায়াবশে বশীভূত হইয়া বলিলেন—“এই বালকদ্বয়কে দ্বিতীয় আদেশ না হওয়া পর্য্যন্ত বন্দীখানায় রাখিতে বল। কারাধ্যক্ষকে আদেশ জানাও যে, ইহারা রাজকীয় বন্দী; কোন প্রকারে যেন কষ্ট না পায়,