পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৩
মহরম পর্ব্ব—ত্রয়ােবিংশ প্রবাহ

বন্দীগৃহ হইতে যেন বহির্গত হইতে না পারে; কোন প্রকার অসম্মান, অবমাননা যেন না হয়।”

 দুই ভ্রাতা করজোড়ে সবিনয়ে তাঁহাদের মনের কথা মুখে প্রকাশ করিতে উদ্যোগী হইতেই এদিকে প্রহরীদল উভয়কে লইয়া কারাগৃহের প্রধান কার্য্য কারকের নিকটে চলিয়া গেল। তাহারা আবদুল্লাহ্ জেয়াদের নিকট একটি কথা বলিতেও সুযোগ পাইলেন না। কারাগৃহে নীত হইলে কারাধ্যক্ষ—(নাম মাস্কুর), উভয় ভ্রাতার রূপমাধুরী দেখিয়া এবং ইহারাই বীরশ্রেষ্ঠ মোস্‌লেমের হৃদয়ের ধন ভাবিয়া সাদরে ও সযত্নে তাঁহাদিগকে স্থান দিলেন। বন্দীগৃহে না রাখিয়া স্বীয় ভবনে উভয় ভ্রাতাকে লইয়া আহারাদি করাইলেন। তাঁহাদের বিশ্রামের জন্য শয্যা রচনা করিয়া দিয়া তিনি ভাবিতে লাগিলেন, “কি করি, রাত্রি প্রভাতেই হউক, দুইদিন পরেই হউক, নরপতি নিশ্চয়ই ইহাদের শিরশ্ছেদ আজ্ঞা প্রদান করিবেন। দুইটি ভাইকে রক্ষা করি কি প্রকারে?”—অনেক চিন্তার পর অর্দ্ধ নিশা অতীত হইলে দুই ভ্রাতাকে জাগাইয়া বলিলেন, “তোমরা আমার সঙ্গে সঙ্গে আইস। কোন চিন্তা নাই। আমি তোমাদিগকে রক্ষা করিব। ইহাতে আমার অদৃষ্টে যাহা থাকে, হইবে। আইস, আমার সঙ্গে আইস।” মোস্‌লেম-পুত্রদয় কারাধ্যক্ষের সঙ্গে সঙ্গে চলিলেন। নগরের বাহির হইয়া কারাধ্যক্ষ কিঞ্চিৎ দূরে চলিয়া গিয়া দুই ভ্রাতাকে বলিলেন, “শুন, তোমরা মনোযোগ দিয়া শুন। এই যে পথের উপর দাঁড়াইয়া আছি—এই পথ ধরিয়া কুদ্‌সীয়া নগরে যাইবে। এই পথ ধরিয়া একটু দ্রুতপদে চলিয়া গেলে রাত্রি প্রভাতের পূর্ব্বেই কুদ্‌সীয়া নগরে যাইতে পারিবে। ঐ নগরে আমার ভাই আছেন,—তাঁহার নাম এই— নামটি মনে রাখিও। নাম করিলেই তাঁহার বাসস্থান লোকে দেখাইয়া দিবে। আমি যে তোমাকে পাঠাইতেছি, তাহার নিদর্শন-স্বরূপ আমার এই অঙ্গুরীয় দিতেছি। সাবধানে রাখিও। কিছু বলিতে হইবে না। এই অঙ্গুরী আমার ভ্রাতাকে দিলেই তিনি তোমাদিগকে তোমাদের গন্তব্যস্থানের কথা জিজ্ঞাসা করিবেন। তোমরা মদিনার নাম করিও। যে উপায়ে হউক—যে কোন কৌশলেই হউক, তিনি তোমাদিগকে মদিনায় পাঠাইয়া দিবেন। এই অঙ্গুরী লও, খোদার হাতে