এব্রাহিম! এবারে আর বাঁচিবার উপায় নাই। এখন উপায় কি? একবার নয়, দুইবার এইরূপ ভুল! আর আশা কি? ভ্রাতঃ! এইবারে রাজা জেয়াদ আমাদিগকে জীবন্তে ছাড়িবে না।”
এব্রাহিম বলিলেন,—“নিরাশ হইয়া এই স্থানে বসিয়া থাকা কাজের কথাই নহে। সূর্য্যোদয় হইলেই আমরা প্রকাশ্য পথছাড়িয়া সম্মুখের ঐ খোর্মা প্রভৃতি ফলের বাগানমধ্যে লুকাইয়া থাকিব। কোন প্রকারে দিনটা কাটাইতে পারিলেই বোধ হয় বাঁচিতে পারি। সন্ধ্যা ঘোর হইলে আমরা মদিনার পথ ধরিব।”
মোহাম্মদ বলিলেন,—“ভাই তবে উঠ, আর বিলম্ব নাই।”
কনিষ্ঠের হস্ত ধরিয়া জোষ্ঠ ত্রস্ত পদে নিকটস্থ খোরমার বাগানে যাইয়া দেখিলেন,—ছোট বড় বহু বৃক্ষপূর্ণ বিস্তৃত ফলের বাগান, বাগানের মধ্যে জলের নহর বহিয়া যাইতেছে। ভ্রাতৃদ্বয় এগাছ সে-গাছ সন্ধান করিয়া নহরের ধারে পুরাতন একটি বৃক্ষের কোটরে দুই দেহ জড়সড়ভাবে এক করিয়া সাধ্যানুসারে আত্মগোপন করিলেন; কিন্তু এক দিকে যে ফাঁক রহিল, সে দিকে তাঁহাদের দৃষ্টি রহিল না। সে সকল বৃক্ষের ছায়া নহরের জলে পড়িয়া ভাসিতেছে; মৃদুমন্দ বায়ুর আঘাতে সেই ছায়াসকল কখনও কাঁপিতেছে, কখনও বা ক্ষুদ্র বৃহৎ আকার ধারণ করিয়া জলের মধ্যে যেন ছুটিয়া যাইতেছে। জলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরঙ্গের সহিত বৃক্ষসকলের ছায়াও হেলিয়া দুলিয়া ছুটাছুটি করিতেছে। ভ্রাতৃদ্বয় যে বৃক্ষকোটরে গাত্রের সহিত গাত্র মিশাইয়া বসিয়া আছেন, কোটরে প্রবেশ-অংশের স্থান অনাবৃত থাকায় তাঁহাদের ছায়া জলে পতিত হইয়া বৃক্ষছায়ার সহিত কম্পিত ও সঙ্কুচিত হইতেছিল এবং প্রশস্ত, স্থূল, সুক্ষ্ম, দীর্ঘ প্রভৃতি নানা প্রকার আকার ধারণ করিতেছিল।
বাগানের এক পার্শ্বে এক ভদ্রলোকের আবাসস্থান। সেই ভদ্রলোকের বাটীর পরিচারিকা নহরের জল লইতে আসিয়া জলে ঢেউ দিয়া কলসী পূর্ণ করিতে করিতে হঠাৎ বৃক্ষছায়ার প্রতি তাহার দৃষ্টি পড়িল। বৃক্ষকোটরের ছায়ার মধ্যে অন্য এক প্রকার ছায়া দেখিয়া পরিচারিকা কলসী জলে ডুবাইয়া চিন্তা করিতে লাগিল ও বৃক্ষকোটরে এ কিসের ছায়া—ঠিক যেন