দুইটি জোড়া-মানুষের মত বোধ হইতেছে। কান, ঘাড়, পিঠ স্পষ্ট দেখা যাইতেছে,—কি ব্যাপার! ভাবিয়া সে কিছুই স্থির করিতে পারিল না। জলপূর্ণ কলসী ডাঙ্গায় রাখিয়া যে বৃক্ষের ছায়ামধ্যে ঐ অপরূপ ছায়া দেখিতেছিল, এক পা দুই পা করিয়া পরিচারিকা সেই বৃক্ষের নিকট যাইয়া দেখিল যে, দুইটি বালক উভয়ে উভয়কে জড়াইয়া ধরিয়া যেন এক-দেহ হইয়া রহিয়াছে। পরিচারিকা বালকদ্বয়ের অবস্থা দেখিয়া অন্তরে আঘাতপ্রাপ্ত হইল। তাহার হৃদয়ে ব্যথা লাগিল,—সে মুখে বলিল,—“আহা! আহা!! তোমরা কাহার কোলের ধন, বাছা রে! দুই জনে এরূপভাবে এই পুরাতন বৃক্ষের কোটরে লুকাইয়া রহিয়াছ কেন বাছা? আমাকে দেখিয়া এত ভয় করিতেছ কেন বাপ? আহা বাছা, তোমাদের কি প্রাণের মায়া নাই? ওরে বাপধন! ঐ কোটরে সাপ বিচ্ছুর অভাব নাই। কার ভয়ে তোরা এ ভাবে গলাগলি করিয়া নীরবে কাঁদিতেছিস? বল্, আমার নিকটে মনের কথা বল্, কোন ভয় নাই। বাপ্। তোরা পেটের সন্তান তুল্য। তোদের দুইখানি মুখ যেন দুইখানি চাঁদ। —বাবা! তোরা কি দুই ভাই? মুখের গড়ন, হাত পায়ের গঠন দেখিয়া তাহাই বোধ হইতেছে। তোরা দুটি ভাই, এক মায়ের পেটে জন্মিয়াছিস, বাপ? কোন্ দুঃখিনীর সন্তান তোরা? বল্, বাবা শীঘ্র বল্, কার ভয়ে, তোরা লুকাইয়া আছিস?”
ভ্রাতৃদ্বয়ের মুখে কোন কথা নাই। দুই ভাই হাত আরও শক্ত করিয়া গলাগলি করিয়া মাথা নীচু করিয়া রহিলেন। পরিচারিকা নিকটে যাইয়া মৃদু মৃদু স্বরে সজল চক্ষে বলিতে লাগিল,—
“হ্যাঁ বাবা! তোরা কি সেই মদিনার মহাবীর মোস্লেমের নয়নের পুত্তলী, হৃদয়ের ধন, জোড়-মাণিক? তাই বুঝি হবে! তাহা না হইলে এত রূপ ‘কুফায়’ কোন ছেলেরই নাই! আহা! আহা!—যেন দুইটি ননীর পুতুল, সোনার চাঁদ, জোড়া-মাণিক। বাবা! তোদের কোন ভয় নাই—আমি অতি সাবধানে রাখিব। রাজবাড়ীর ঢেঁড়রা শুনিয়াছি। সে জন্য কোন ভয় করি না। আমি তোদের কথা কাহারও নিকটে বলিব না। তোরা আমার পেটের সন্তান—আয় বাবা! আমার অঞ্চলের মধ্যে আয়, প্রাণের মাঝে রাখিব।”