পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৬৮

জিজ্ঞাসা করিলে কর্ত্তা বলিলেন, “সে কথা আর কি বলিব! আমার কপাল মন্দ, আমার চক্ষে পড়িবে কেন? সারাটি দিন আর এই রাত্রি এক প্রহর পর্য্যন্ত কত গলি-পথে, কত বড় বড় রাস্তায় দোধারী ঘরের কোণের আড়াল মধ্যে, কত ভাঙ্গা বাড়ীর বাহিরে ভিতরে, কত স্থানে খুঁজিলাম! আমার এ পোড়া অদৃষ্টে তাহা ঘটিবে কেন? আমি হতভাগ্য, চিরকাল দুঃখকষ্টের সহিত আমার ঘনিষ্ঠতা, আত্মীয়তা,—আমার চক্ষে পড়িবে কেন? অনটন আমার অঙ্গের ভূষণ, অলক্ষী আমার সংসার ঘিরিয়া বসিয়াছে, শয়তান আমার হিতৈষী বন্ধু সাজিয়াছে, আমি দেখা পাইব কেন? আমার চক্ষে পড়িবে কেন? এত পরিশ্রম বৃথা হইল! সারাটি দিন উপবাস, না খাইয়া কত স্থানেই যে ঘুরিয়াছি, সে দুঃখের কথা আর কি বলিব? হায় হায়! আমার কপাল! এক জনের চক্ষে অবশ্যই পড়িবে, সে লালে লাল হইবে!”

 গৃহিণী বলিলেন, ‘আসল কথা ত কিছুই শুনিলাম না। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘এত বিলম্ব হইল কেন?’ তুমি সাত গ্রাম বেড় দিয়া ভাগ্যলিপি— অদৃষ্ট মন্দ, এই সকল খামখেয়ালী কথা তুলিয়া বসিলে! সারাটি দিন, আর রাত্রিও প্রায় দেড় প্রহর— এত সময় কোথায় ছিলে? কি করিলে? তাহাই শুনিতে চাই। আর একটি কথা, আজ তুমি যেমন দুঃখের সহিত আক্ষেপ করিতেছ,—অদৃষ্টের দোষ দিতেছ—এরূপ আক্ষেপ, এরূপ কপালদোষের কথা ত আর কখনও তোমার মুখে শুনি নাই?’

 হারেস দুঃখিতভাবে নাকীসুরে ক্ষীণস্বরে বলিতে লাগিলেন,—“তোমায় আর কি বলিব? আমাদের বাদশাহ্ জেয়াদ, মদিনার হজরত হোসেনকে প্রাণে মারিবার যোগাড় করিয়া, মিথ্যা স্বপ্ন, মিথ্যা রাজ্যদান ভাণ করিয়া হজরত হোসেনকে—”

 গৃহিণী বলিলেন, “সে সকল কথা আমরা জানি। হজরত হোসেনের অগ্রে মোস্‌লেম আসিলেন, মোস্‌লেমকে কৌশল করিয়া মারিবার কথাও জানি।”

 “তবে ত তুমি সকলই জান। সেই মোস্‌লেমের দুই পুত্র পলাইয়াছে। তাহাদের জন্য রাজসরকার হইতে যোষণা করা হইয়াছে—ধরিয়া দিতে