পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৯
মহরম পর্ব্ব—ত্রয়ােবিংশ প্রবাহ

পারিলেই এক হাজার মোহর পুরস্কার দেওয়া হইবে। প্রথম, তাহারা শহর-কোতোয়ালের হাতে ধরা পড়িয়াছিল। বাদশাহ্-নামদারের দরবারে হাজির করিলে আমাদের বাদশাহ্ ছেলে দুইটির মুখের ভাব, সুশ্রী সুন্দর মুখ দুখানি ও দেহের গঠন দেখিয়া ‘মাথা-কাটা’র আদেশ দিতে পারিলেন না; বন্দীখানায় কয়েদ করিতে অনুমতি করিলেন। বন্দীখানার প্রধান কর্ম্মচারী মস্কুর ছেলে দুইটির রূপে মোহিত হইয়া তাহাদিগকে ছাড়িয়া দেন। বাদশাহ্-নামদার পর্য্যন্ত সেই সংবাদ পৌঁছিলে, মস্কুরের শিরশ্ছেদ হইল। আজ আবার নূতন ঘোষণা জারী হইয়াছে, যে সেই পলায়িত ছেলে দুইটিকে ধরিয়া দিবে, তাহাকে পাঁচ হাজার মোহর পুরস্কার দেওয়া হইবে। যে আশ্রয় দিয়া গোপনে রাখিবে, মস্কুরের ন্যায় সেই দণ্ডেই তাহার শিরশ্ছেদ হইবে। আমি মোস্‌লেমের ছেলে দুইটির জন্য আহার-নিদ্রা-বিশ্রাম ত্যাগ করিয়া কোথায় না সন্ধান করিয়াছি। ধরিয়া বাদশাহের দরবারে হাজির করিতে পারিলেই পাঁচ হাজার মোহর! যে পাইবে, সে কতকাল বসিয়া খাইতে পারিবে, বুঝিয়া চলিলে হয় ত মহাধনী হইয়া কত পুরুষ পর্য্যন্ত সুখে থাকিতে পারিবে! এত সন্ধান করিলাম, কিছুই করিতে পারিলাম না। আজ বেশী টাকার লোভে হাজার হাজার লোক পাহাড় জঙ্গল, যেখানে যাহার সন্দেহ হইতেছে সেখানেই খুঁজিতেছে। আমি বহুদূরে গিয়াছিলাম। কোথাও কিছু না পাইয়া শেষে খোর্‌মার বাগান খুঁজিয়া তন্ন তন্ন করিলাম, প্রতি বৃক্ষের গোড়ায়, কোটরে খুঁজিলাম, কোথাও কিছুই পাইলাম না। তাহাতেই বলিতেছিলাম আমার ভাগ্যে ঘটিবে কেন? হতভাগার চক্ষে তাহারা ধরা পড়িবে কেন?”

 গৃহিণী বলিলেন, “হায়! হায়! সেই পিতৃহীন অনাথ বালক দুইটিকে ধরিয়া দুরন্ত জালেম বাদশাহের নিকটে দিলে পাঁচ হাজার মোহর পাইবে তাহা সত্য, কিন্তু আর একটি হৃদয়বিদারক মর্ম্মান্তিক সাংঘাতিক কথা কি তোমার মনে উদয় হয় নাই? নিরপরাধ দুইটি এতিমকে বাদশাহের হাতে দিলে, সে নিষ্ঠুর পাষাণ-প্রাণ শাহ্ জেয়াদ কি তাহাদিগকে স্নেহ করিয়া যত্নে রাখিবে? না তাহাদের চির-দুঃখিনী জননীর নিকট মদিনায় পাঠাইয়া দিবে? হাতে পাইবামাত্র শিরশ্ছেদ—উহুঃ! বালক দুইটির শিরশ্ছেদের হুকুম প্রদান