পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৭৪

তোতে আর এতে ভিন্ন কি? অতি সামান্য! সেই সামান্য অংশটুকু ছাড়িয়া দিলে—তুইও যেমন, (পালিত পুত্রের হস্ত ধরিয়া)—এও তেমনি। পরিচারিকাকে যে কথা বলিতে বলিয়াছিলাম তোমাদের দুইজনকে একত্রে বসাইয়া সে তাহা বলিয়াছে। তোমরা সকলই শুনিয়াছ। এখন সেই বালক দুইটির রক্ষার উপায় কি? আমি ভাবিয়াছিলাম—তোমাদের পিতা বাটী আসিলে ছেলে দুইটির কথা বলিব। তিনি কতই দুঃখ করিবেন, ছেলে দুইটির রক্ষার জন্য বিশেষ চেষ্টা করিবেন। এখন দেখিতেছি, তিনিই তাহাদের সংহারক, তিনিই তাহাদের প্রাণনাশক প্রধান শত্রু। মোহরের লোভে তিনি ঐ বালক দুইটিকে পরিবার জন্য বহু চেষ্টা, বহু পরিশ্রম করিয়াছেন। নিদ্রা হইতে উঠিয়া এই রাত্রেই পুনরায় তাহাদের অন্বেষণে ছুটিবেন। তিনি যদি বালক দুইটির সন্ধান পান, তাহা হইলে আর রক্ষা নাই। কিছুতেই তাহারা দুরন্ত বাঘের মুখ হইতে রক্ষা পাইবে না—বাঁচিবে না। এক্ষণে তোমরাই আমার সহায়-সম্বল-বল, তোমরা দুই ভাই যদি আমার সহায়তা কর, তোমরা দুই ভাই যদি আমার পক্ষে থাকিয়া পিতৃহীন বালক দুইটির রক্ষার জন্য চেষ্টা কর, তবে তাহারা বাঁচিতে পারে। তোমাদের পিতার চক্ষে পড়িলে কিন্তু কিছুতেই রক্ষা পাইবে না।”

 দুই ভাই বলিল,—“মা! আপনি ব্যস্ত হইবেন না। আমরা সকলই শুনিয়াছি,—বালকদ্বয়ের অবস্থা সকলই জানিয়াছি; তাহার বাটীতেই আছে তাহাও জানি। আপনি অত উতলা হইবেন না। পিতা গুরুজন, তাঁহার নিন্দা করিব না। আমরা তাঁহার অর্থলালসার কথা শুনিয়া বড়ই দুঃখিত হইয়াছি,—আক্ষেপ করিয়াছি। কি করি, পিতা গুরুজন,—তাঁহার কথায় প্রতিবাদ করা মহাপাপ। যাহাই হউক, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। রাত্রি দুইপ্রহর অতীত হইলেই আমরা দুই ভাই বালকদ্বয়কে সঙ্গে করিয়া মদিনার পথে যাইব। যদি সুবিধা করিতে পারি, ভালই; না করিতে পারি, আমরা সঙ্গে করিয়া লইয়া গিয়া মদিনায় তাহাদিগকে রাখিয়া আসিব।”

 গৃহিণী সন্তুষ্টচিত্তে অথচ চক্ষুজলে ভাসিতে ভাসিতে দুই পুত্রের দুই হাত দুই করে ধরিয়া আপন মাথার উপর রাখিয়া বলিলেন, “বাবা! তোরা আমার