কার্য্যের প্রথম পালা শেষ হয়। দ্বিতীয় পালা মোহরগুলি গণিতে যা বিলম্ব! যে ঘোড়ার পৃষ্ঠে বালকদ্বয়ের মাথা চাপাইয়া রাজদরবারে যাইবেন, সেই ঘোড়ার পৃষ্ঠেই মোহরের ছালা তুলিয়া শীঘ্রই বাটীতে আসিতে পারিবেন—এইরূপ কার্য্যপ্রণালী মনে মনে স্থির করিয়া হারেস শীঘ্র শীঘ্র বালকদ্বয়ের মাথা কাটিতে আগ্রহ করিতেছেন। তিনি বালক দুইটিকে অশ্ব হইতে নামাইয়া সম্মুখে স্থাপন করিলেন। বালকদ্বয় স্বপ্নে যদিও পিতা মোস্লেমকে দেখিয়া শীঘ্রই পিতার নিকট যাইতে হইবে—ইহা স্বপ্নযোগে শুনিয়া আনন্দিত হইয়াছিলেন, কিন্তু সে কতক্ষণ? কুহকিনী দুনিয়ার এমনই মায়া যে, তাহাকে ছাড়িবার কথা কর্ণে প্রবেশ করিলেই প্রাণ কাঁদিয়া উঠে। মৃত্যুর কথা মনে পড়িলেই হৃদয়ে ভয়ের সঞ্চার হয়। প্রাণের মায়া কাহার না আছে? মোস্লেমের পুত্রদ্বয় হারেসের সম্মুখে দণ্ডায়মান। উলঙ্গ খরধার অসিহস্তে কালান্তকের ন্যায় রক্তজবা সদৃশ আঁখিতে চাহিয়া হারেস বালক দুইটিকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিলেন।
দুই ভাই কাঁদিতে কাঁদিতে হারেসের পদতলে মাথা রাখিয়া বলিতে লাগিলেন,—“দোহাই তোমার! আমাদিগকে প্রাণে মারিও না। তোমার পদতলে মাথা রাখিয়া বলিতেছি, আমাদিগকে ছাড়িয়া দাও। আমাদের চিরদুঃখিনী মায়ের মুখখানি একবার দেখিতে ছাড়িয়া দাও-মদিনায় যাই। আর কখনও কুফায় আসিব না।”
বালকদ্বয়ের কাতর ক্রন্দনে পাষাণ প্রাণ হারেসের কিছুই হইল না। দুরন্ত নরপিশাচের কর্ণে পিতৃহারা বালকদ্বয়ের করুণ ক্রন্দন প্রবেশই করিল না; একটি বর্ণও না। হারেস বালকদ্বয়ের শির লক্ষ্য করিয়া তরবারি উত্তোলন করেন, আবার কে যেন বাধা দেয়, থামিয়া যান। আবার ক্ষণকাল পরে মুখ চোখ লাল করিয়া, আঁখিদ্বয়ের তারা বাহির করিয়া, বালকদ্বয়ের শির লক্ষ্য করিয়া তরবারি উত্তোলন করেন, আবার থামিয়া যান। কি মর্ম্মঘাতী দৃশ্য। হারেসের এই অত্যাচার, অমানুষিক ব্যবহার ও হৃদয়বিদারক ঘটনার সূত্রপাত, মুক্ত আকাশে দিননাথ শতসহস্র কিরণজাল বিস্তার করিয়া দেখিতেছেন। ফোরাত নদীতীরে এই ঘটনা, ফোরাত-জলও দেখিয়া যাইতেছে, প্রবাহে প্রবাহে হারেসের এই কু-কীর্ত্তি দেখিয়া বহিয়া