পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৩
মহরম পর্ব্ব—ত্রয়ােবিংশ প্রবাহ

করিলে! টাকার লোভে আজ তোমার নিকটে পিতৃস্নেহও পরাস্ত হইল। ভালই করিলে! তোমার এ কীর্ত্তিগান চিরকাল জগতের লোকে গাহিবে। দুঃখ নাই!—তোমার পুত্রের প্রাণ তুমি বিনাশ করিয়াছ, তাহাতে হতভাগিনীর দুঃখ নাই। তবে তোমার ঔরসজাত নয়, আমার গর্ভে জন্মে নাই, কিন্তু আমার বুকের দুধ দিয়া যাহাকে পালিয়া পুষিয়া এত বড় করিয়াছিলাম—সেই পালিত পুত্রের জন্য মনটা একটু দমিয়াছে। তাই বলিয়া তোমাকে কিছু বলিব না। এ কথা তুমি নিশ্চয় জানিও—আমি বঁচিয়া থাকিতে, আমার প্রাণ দেহে থাকিতে আমার সম্মুখে তোমকে মোস্‌লেম-পুত্রদ্বয়ের মাথা কাটিতে দিব না, কখনই দিব ন!। আগে আমাকে কাটিয়া খণ্ড খণ্ড কর, তাহার পর মোস লেম-পুত্রদ্বয়ের গায়ে হাত দিও—অস্ত্র বসাইও।”

 মানুষের কু-প্রবৃত্তি উত্তেজিত হইলে আর কি রক্ষা আছে? হারেস বলবান্, কৌশলী। তিনি কৌশলে স্ত্রীর হাত ছাড়াইয়া রক্ত—আঁখি ঘুরাইয়া বলিলেন,—তোকে তোর ছেলের নিকট পাঠাচ্ছি। যা তোর ছেলে কোলে ক’রে শুয়ে থাক্।” তাহার পর বিষম রোষে তিনি স্ত্রীর প্রতি আঘাত করিলেন।—“যা শুইয়া পড়্! শুইয়া শুইয়া তামাসা দেখ্!”

 হারেসের স্ত্রী মৃত্তিকায় পড়িতেই হারেস উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন,—“এই মোস্‌লেমের পুত্রদ্বয় যায়! কে রক্ষা কর্‌বি আয়। মোহাম্মদের শিরে তরবারি তুলিতেই এব্রাহিম কাঁদিয়া বলিলেন, “দেখ হারেস! আগে আমার মাথা কাট।” তিনি মাথা নোয়াইয়া দিয়া বলিলেন, “আমি বড় ভাইয়ের মাথা-কাটা এই চক্ষে দেখিতে পারি না। হারেস! তোমার পায়ে ধরি, আগে আমার মাথা কাট।” হারেস মোহাম্মদকে ছাড়িয়া এব্রাহিমের মাথায় তরবারি তুলিতেই মোহাম্মদ কাঁদিয়া বলিলেন, “হারেস! অমন কার্য্য করিও না—কখনও করিও না। আমার প্রাণতুল্য কনিষ্ঠ ভাই! আমারই মাথা আগে কাট, বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথা-কাটা কোন প্রাণে দেখিবে? দোহাই তোমার— দোহাই তোমার ধর্ম্মের—আগে আমার মাথা কাট।”

 হারেস মোহাম্মদের কথায় থতমত খাইয়া ক্ষণকাল স্থিরভাবে থাকিয়াই