পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৮৪

মহা সাংঘাতিক মূর্ত্তি ধারণ করিয়া অসি ঘুরাইয়া বলিলেন,—“তোদের কাহারও কথা শুনিব না, আর শুনিব না, বিলম্বও করিব না। ভ্রাতৃ-মায়া মিটাইয়া দিতেছি।”—বলিয়াই অগ্রে মোহাম্মদের মাথা কাটিয়া ফেলিলেন। পরে কনিষ্ঠ ভ্রাতা এব্রাহিমের মাথা মাটিতে গড়াইয়া দিলেন। মোস্‌লেম-পুত্রদ্বয়ের মৃতদেহ ফোরাত জলে নিক্ষেপ করিয়া তাহাদের মস্তক অতি সাবধানে লইয়া হারেস অশ্বে চাপিলেন। রক্তমাখা তরবারি-হস্তেই একেবারে মহারাজ জেয়াদের দরবারে উপস্থিত হইয়া তিনি বলিলেন,—

 “বাদশাহ্-নামদারের আদেশ প্রতিপালন করিয়াছি। তবে আজ্ঞার কিঞ্চিৎ অতিরিক্ত হইয়াছে। আপনি যাহা করিতেন, তাহাই করিয়াছি। জীবন্ত আনিতে পারি নাই, অপরে কাড়িয়া লইবে সন্দেহে জীবনান্ত করিয়া দুই ভাইয়ের এই ‘মাথা’দুটি আনিয়াছি—এই দেখুন! আমার পুরস্কার—আপনার আদিষ্ট পুরস্কার আমাকে দিন, আমি চলিয়া যাই। স্বীকৃত পঞ্চ সহস্র মোহর আনিতে আজ্ঞা করুন। মহারাজ! ছেলে দুইটিকে খুঁজিয়া বাহির করিতে যাহা হইবার হইয়াছে, তাহা আর বলিবার নহে!”

 নরপতি আবদুল্লাহ্ জেয়াদ, রাজদরবারের সভাসদগণ, অমাত্যগণ, দরবারের যাবতীয় লোক হারেসের এই অমানুষিক কার্য্য দেখিয়া ক্ষণকাল নিস্তব্ধভাবে রহিলেন। সকলেই মোস্‌লেমের পুত্রদ্বয়ের জন্য অন্তরে বিশেষ আঘাতপ্রাপ্ত হইলেন। কাহারও মুখে কোন কথা সরিল না।

 নরপতি আবদুল্লাহ্ জেয়াদ হারেসের প্রতি লক্ষ্য করিয়া দুঃখিতভাবে বলিলেন,—“ওহে! সুন্দর বালক দুইটিকে এরূপভাবে শিরশ্ছেদ করিলে কেন? যাও, শীঘ্র দরবারের বাহিরে যাও। উহাদের ধুলি-রক্তজমাটযুক্ত মস্তক ধৌত করিয়া একটি পরিস্কার পাত্রে করিয়া আমার সম্মুখে আনয়ন কর।”

 হারেস তখনই মস্তকদ্বয় ধৌত করিয়া মূল্যবান পাত্রোপরি রাখিয়া নরপতি জেয়াদের সম্মুখে উপস্থিত করিলেন।

 জেয়াদ বলিলেন,—“ওহে যুগল-বালকহন্তা পাষাণপ্রাণ হারেস! তোমার