দামেস্কাধিপতি মহিষীকে অভ্যর্থনা করিয়া অতি যত্নে মসনদের[১] পার্শ্বে বসাইয়া বলিতে লাগিলেন, “মহিষি! তোমার কথাক্রমে আজ বহু যত্ন করিয়াও কৃতকার্য্য হইতে পারিলাম না; মনের কথা কিছুতেই ভাঙ্গিল না। পরিশেষে আপনিও কঁদিল, আমাকেও কাঁদাইল! সে রাজ্যধনের ভিখারী নহে, অবিনশ্বর ঐশ্বর্য্যের ভিখারী নহে; কেবল এই মাত্র বলিল যে, আমার আশা পূর্ণ হইবার নহে। আর শেষে যাহা বলিল তাহা মুখে আনা যায় না; বোধ হইতেছে, যেন কোন মায়াবিনী মোহিনীর মোহনীয় রূপে মুগ্ধ হইয়া এইরূপ মোহময় অবস্থা প্রাপ্ত হইয়াছে।”
রাজমহিষী অতি কষ্টে মস্তক উত্তলোন করিয়া কম্পিতকণ্ঠে বলিতে লাগিলেন, “মহারাজ! আমি অনেক সন্ধানে জানিয়াছি, আর এজিদ্ও আমার নিকটে আভাসে বলিয়াছে;—আবদুল জব্বারকে বোধ হয় জানেন?”
মাবিয়া কহিলেন, “তাহাকে ত অনেক দিন হইতে জানি।”
“সেই আবদুল জব্বারের স্ত্রীর নাম জয়নাব।”
হাঁ হাঁ ঠিক হইয়াছে! আমার সঙ্গে কথা কহিবার সময় ‘জয়’ পর্য্যন্ত বলিয়া আর বলিতে পারে নাই।” একটু অগ্রসর হইয়া মাবিয়া আবার কহিলেন, হাঁ! সেই জয়নাব কি?”
আমার মাথা আর মুণ্ডু! সেই জয়নাবকে দেখিয়াই ত এজিদ্ পাগল হইয়াছে। আমার নিকট কাঁদিয়া কাঁদিয়া বলিতে লাগিল, মা! যদি আমি জয়নাবকে না পাই, তবে আর আমাকে দেখিতে পাইবেন না, নিশ্চয়ই জানাজাক্ষেত্রে[২] কাফনবস্ত্রের তাবুতাসনে ধরাশায়ী দেখিবেন।” এই পর্য্যন্ত বলিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে মহিষী পুনরায় কহিলেন, “আমার এজিদ্ যদি না বাঁচিল, তবে আর এই জীবনে ও বৃথা ধনে ফল কি?”
যেন একটু সয়োষে মাবিয়া কহিলেন, “মহিষি! তুমি আমাকে কি করিতে বল?”
“আমি কি করিতে বলিব? যাহাতে এজিদের প্রাণরক্ষা হয় তাহারই