আমরা এজিদের সৈন্য, কিন্তু আপনার মাতামহের উপদিষ্ট ধর্ম্মে দীক্ষিত। আমাদের কথায় অবিশ্বাস করিবেন না, শত্রুর বেতনভোগী বলিয়াও শত্রু মনে করিবেন না। আমরা কিছুরই প্রত্যাশী নহি, কেবল আপনার দুঃখে দুঃখিত হইয়া কয়েকটি কথা মাত্র বলিতে অতি সাবধানে আপনার শিবিরে আসিয়াছি। সময় যখন মন্দ হইয়া উঠে, তখন চতুর্দ্দিক হইতেই অমঙ্গল ঘটিয়া থাকে; এক্ষণে আপনার চতুর্দ্দিকেই অমঙ্গল দেখিতেছি। মোস্লেমের ন্যায় হিতৈষী বন্ধু জগতে আপনার কেহই হইবে না। আবদুল্লাহ্ জেয়াদ আপনার প্রাণ বিনাশ করিবার আশায় ষড়যন্ত্র করিয়াছিল। ভাগ্যগতিকে মোস্লেম কুফায় যাইয়া আবদুল্লাহ্ জেয়াদের হস্তে বন্দী হইলেন। শেষে তাহারি চক্রান্তে ওত্বে অলীদ ও মারওয়ানের সহিত যুদ্ধে মোস্লেম বীরপুরুষের ন্যায় শত্রু বিনাশ করিয়া সেই শক্রহস্তেই প্রাণ পরিত্যাগ করিয়াছেন। তাঁহার সঙ্গে যে সহস্র সৈন্য ছিল, তাহারাও ওত্বে অলীদ ও জেয়াদের হস্তে প্রাণ বিসর্জ্জন দিয়া স্বর্গবাসী হইয়াছে। এক্ষণে সীমার, ওমর প্রভৃতি আপনার প্রাণবধের জন্য নানা প্রকার চেষ্টায় আছে। মারওয়ান, ওত্বে অলীদ এ পর্য্যন্ত আসিয়া উপস্থিত হয় নাই। এজিদের আজ্ঞাক্রমে আমরাই ফোরাত নদীকূল একেবারে বন্ধ করিয়া দিয়াছি। মনুষ্য দূরে থাকুক, পশু-পক্ষীকেও ছাড়িয়া দিলে নদীতীরে যাইতে কাহারও সাধ্য নাই। সংক্ষেপে সকলই বলিলাম, যাহা ভাল বিবেচনা হয়, করিবেন।”—এই বলিয়াই আগন্তুক চতুষ্টয় হোসেনের পদচুম্বন করিয়া চলিয়া গেল।
মোস্লেমের দেহত্যাগের সংবাদে হোসেন মহা শোকাকুল হইয়া কাঁদিতে কাঁদিতে বলিতে লাগিলেন, “হা ভ্রাতঃ মোস্লেম! যাহা বলিয়া গিয়াছিলে তাহাই ঘটিল!—‘হোসেনের প্রাণবিনাশ করিতেই যদি আবদুল্লাহ্ জেয়াদ কোন ষড়যন্ত্র করিয়া থাকে, তবে সে যড়যন্ত্রে আমিই পড়িব, হোসেনের প্রাণ ত রক্ষা পাইবে।’ ভাই! নিজ প্রাণ দিয়া হোসেনকে জেয়াদের হস্ত হইতে রক্ষা করিলে! তুমি ত মহা অক্ষয় স্বর্গসুখে সুখী হইয়া জগৎ-যন্ত্রণা হইতে পরিত্রাণ পাইলে। আমি দুরন্ত কারবালা প্রান্তরে অসহায় হইয়া বিন্দুমাত্র জলের প্রত্যাশায় বোধ হয় সপরিবারে জীবন হারাইলাম!