পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৯৮

ফোরাতকূলে যাইয়া বিপক্ষগণকে বলিতে লাগিলেন, “ওরে পাষাণহৃদয় বিধর্ম্মিগণ! যদি প্রাণের মমতা থাকে, যদি আর কিছু দিন জগতে বাস করিবার ইচ্ছা থাকে, তবে শীঘ্র নদীকূল ছাড়িয়া পলায়ন কর্। দেখ, আবদুল ওহাব নদীকূল উদ্ধার করিয়া দুগ্ধপােষ্য শিশুহন্তার মস্তক নিপাত করিবার জন্য আসিয়াছে। তোদের বুদ্ধিজ্ঞান একেবারেই দূর হইয়াছে, তােরা কি এই অকিঞ্চিৎকর জীবন চিরদিনেরই জন্য মনে করিয়াছিস? এ জীবনের কি আর অন্ত নাই? ইহার কি শেষ হইবে না? শেষ দিনের কথা কি একেবারে ভুলিয়া গিয়াছিস? যে দিন স্বর্গাসনে বিচারপতি স্বয়ং বিচারাসনে বাসয়া জীবমাত্রের পাপপুণ্যের বিচার করিবেন, বল ত কাফের, সেদিন আর তােদের কে রক্ষা করিবে। সেই সহস্র সহস্র সূর্য্যকিরণের অগ্নিময় উত্তাপ হইতে কে বাঁচাইবে? সেই বিষম দুর্দ্দিনে অনুগ্রহ-বারি সিঞ্চনে কে আর তােদের পিপাসা নিবারণ করিয়া শান্তি দান করিবে? বল্ ত কাফের! কাহার নাম করিয়া সেই দুঃসহ নরকাগ্নি হইতে রক্ষা পাইবি? অর্থের দাস হইলে কি আর ধর্ম্মাধর্ম্মের জ্ঞান থাকে না? যদি যুদ্ধের সাধ থাকে, সে সাধ অবশ্যই মিটাইব। এখনও বলিতেছি, ফোরাতকূল ছাড়িয়া দিয়া সেই বিপদকাণ্ডারী প্রভু হজরত মােহাম্মদের পরিজনগণের প্রাণ রক্ষা কর। অবলা অসহায়দিগকে শুষ্ককণ্ঠ করিয়া মারিতে পারিলেই কি বীরত্ব প্রকাশ পায়? এই কি বীরধর্ম্মের নীতি? দুগ্ধপােষ্য শিশুসন্তানকে দূর হইতে চোরের ন্যায় বধ করাই কি তােদের বীরত্ব? যদি যথার্থ যুদ্ধের সাধ থাকে, যদি যথার্থই বীরত্ব দেখাইয়া মরিতে ইচ্ছা থাকে, আবদুল ওহাবের সম্মুখে আয়! যদি মরিতে ভয় হয়, তবে ফোরাতকূল ছাড়িয়া পলায়ন কর্। ন্যূনতা স্বীকার কিংবা যাচ্ঞা করিলে আবদুল ওহাব পরম শত্রুকেও তাহার প্রাণ ভিক্ষা দিয়া থাকে। মদিনাবাসীরা তােদের ন্যায় যুদ্ধবিদ্যায় শিক্ষিত নহে—এই অহঙ্কারেই তােরা মাতিয়া আছিস্। কিন্তু ঈশ্বরপ্রসাদে তাহারা যথার্থই বীর ও যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী।

 আবদুল ওহাব অশ্বে কশাঘাত করিয়া শক্রদলের সম্মুখে চক্রাকারে ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিলেন, কেহই তাঁহার সম্মুখে আসিতে সাহস করিল