পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পঞ্চবিংশ প্রবাহ

 সূর্য্যদেব যতই উর্দ্ধে উঠিতেছেন, তাপাংশ ততই বৃদ্ধি পাইতেছে। হোসেনের পরিজনেরা বিন্দুমাত্র জলের জন্য লালায়িত হইতেছেন; শত বীরপুরুষ শত্রু হস্তে প্রাণত্যাগ করিতেছেন। ভ্রাতা, পুত্র, স্বামীর শোণিতাক্ত কলেবর দেখিয়া কামিনীরা, সময়ে সময়ে পিপাসায় কাতর হইতেছেন। চক্ষুতে জলের নাম মাত্রও নাই, সে যেন একপ্রকার বিকৃত ভাব, কাঁদিবারও বেশী শক্তি নাই। হোসেন চতুর্দ্দিকে চাহিয়া দেখিলেন। বন্ধুবান্ধবের মধ্যে আর কেহই নাই! রণসজ্জিত হইয়া জয়লাভের জন্য শত্রু সম্মুখীন হইতে আদেশের অপেক্ষায় তাঁহার সম্মুখে আজ কেহই আসিতেছে না। হোসেন এক দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া বলিলেন, “হায়। এক পাত্র বারি প্রত্যাশায় এত আত্মীয় বন্ধুবান্ধব হারাইলাম, তথাপি কাহারও পিপাসা নিবারণ করিতে পারিলাম না। কারবালা-ভূমিতে রক্তস্রোত বহিতেছে, তথাপি স্রোতঃস্বতী ফোয়াতকে শত্রুহস্ত হইতে উদ্ধার করিতে পারিলাম না। এক্ষণে আর বাঁচিবার ভরসা নাই, আশাও নাই, আকাঙক্ষাও নাই।”

 হাসানপুত্র কাসেম পিতৃব্যের এই কথা শুনিয়া সুসজ্জিত বেশে সম্মুখে করজোড়ে দণ্ডায়মান হইয়া বিনীতভাবে বলিতে লাগিলেন, “তাতঃ! কাসেম এখনও জীবিত আছে। আপনার আজ্ঞাবহ চিরদাস আপনার সম্মুখে দণ্ডায়মান আছে। অনুমতি করুন, শত্রুকূল নির্ম্মূল করি।”

 হোসেন বলিলেন, “কাসেম, তুমি পিতৃহীন, তোমার মাতার তুমিই এক মাত্র সন্তান; তোমাকে এই ভয়ানক শত্রুদলমধ্যে কোন প্রাণে পাঠাইব?”

 কাসেম বলিলেন, “ভয়ানক!—আপনি কাহাকে ভয়ানক শত্রুজ্ঞান করেন? পথে ক্ষুদ্র মক্ষিকা, পথের ক্ষুদ্র পিপীলিকাকে আমি যেমন ক্ষুদ্র জ্ঞান করি, আপনার অনুমতি পাইলে এজিদের ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর সৈন্যাধ্যক্ষগণকেও সেই